সরিষা বা সরষে বিশ্বের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের একটি অতি উপকারী ভোজ্য তেল ফসল। সরষের তেল ব্যবহার করেনা এমন মানুষ পাওয়া যাবে না, এ নিশ্চিতভাবে বলা যায়। বিশেষ করে সরিষা গোটা এশিয়ার সকল দেশের মানুষের প্রধান ভোজ্য তেল।
সরিষা বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর উৎপত্তিস্থলও এশিয়া। ভারতীয় উপমহাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে শীতকালীন রবি শস্য হিসেবে সরিষার চাষ করা হয়। সরিষার গাছ দৈর্ঘ্যে ১ মিটার মত হয়, তবে রাই সরিষা ২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে।
সরিষা বা সরষে ব্রাসিকা (Brassica) বা ক্রুসিফেরি (Cruciferae) গোত্রের কয়েক প্রজাতির তেল প্রদায়ী দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ।এর ডিম্বক বক্রমুখী ৷
সরিষা বাংলাদেশের মানুষের প্রধান ভোজ্য তেল। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় পৌনে ৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে এর চাষাবাদ করা হয়, যা থেকে প্রায় তিন লক্ষ টন তেল পাওয়া যায়। বিভিন্ন জাতের সরিষার বীজে প্রায় ৪০-৪৪% তেল থাকে। সরষে বীজ পিসে তৈল আহরণের পর যে খোসা থাকে তাকে বাঙ্গালি মানুষজন খৈল বলে থাকে। সে খৈলে প্রায় ৪০% আমিষ থাকে। তাই খৈল গরু ও মহিষের জন্য খুব পুষ্টিকর খাদ্য।
বাংলাদেশে ৩ প্রকার সরিষার চাষ করা হয়। এ গুলো হলো-টরি, শ্বেত ও রাই।
সরিষার দানা মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সরিষার দানা পিষে সরিষার তেল তৈরি করা হয় যা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। সরিষার পাতা সরিষার শাক বা সর্ষে শাক হিসেবে খাওয়া হয়।
সরিষা ফুলে স্ব-পরাগায়ন ঘটে থাকে। স্বপরাগায়ন এর ফলে পরাগরেণুর অপচয় কম হয়, পরাগায়নের জন্য বাহক এর উপর নির্ভর করতে হয় না এবং পরাগায়ন নিশ্চিত হয়। এর ফলে নতুন যে উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়, তাতে বৈশিষ্ট্যের কোন পরিবর্তন আসে না এবং কোন একটি প্রজাতির চরিত্রগত বিশুদ্ধতা বজায় থাকে। তবে এতে জিনগত বৈচিত্র্য কম থাকে ।এই বিচার থেকে জন্ম নেওয়া নতুন গাছের অভিযোজন ক্ষমতা কমে যায় এবং অচিরেই প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটে।
সরিষা ক্ষেতের জন্য সারা এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ খুবই পরিচিত একটি নাম। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে থাকা সরিষা ক্ষেত দেখতে অনেক বিদেশী পর্যটক বা ভ্রমণবিলাসী মানুষ এখানে আসেন। দুই পাশে বিস্তৃত হলুদ ক্ষেতের মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে সারি সারি খেজুর গাছ কিংবা তাল গাছ।
রাস্তার দু’ধারে পথে-ঘাটে, মাঠে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধ এবং বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে উজ্জ্বল হলুদ রঙের সরিষা ফুলের সমারোহ। দৃষ্টিনন্দন এ দৃশ্য দেখে যেনো জুড়িয়ে যায় সবার মন-প্রাণ।
কুয়াশায় ধূসর প্রান্তর, তাও চারদিকে হলুদের সমাহার। দূর থেকে হলুদের এমন আবাহন আর কোথায়ও আছে কি-না আমাদের জানা নেই। হলুদ সরষে মাঠ দেখলে মনে হবে যেনো রূপকথার রাজকুমারীর গায়ে হলুদ। প্রজাপতি, মৌমাছি, হলুদিয়া-নীলরঙা পাখি, পোকামাকড় থেকে শুরু করে অনেককিছুরই সমাহার ঘটে এই সরষে মাঠে!
বর্তমান সময়ে সরিষা ক্ষেতগুলোর কোনো কোনো জায়গায় মধুচাষিরা মধু সংগ্রহের কাজও করে থাকেন।
সরিষার খৈল পশুখাদ্য ও জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধিও কাজে ব্যবহার হয়। সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া জমিতে সরিষার আবাদ করলে ওই জমিতে সরিষার পাতা পড়ে জমির খাদ্য চাহিদা অনেকাংশে মিটিয়ে থাকে।