শালুক: গ্রাম-বাংলার হাওর বিলে জন্ম নেয়া এক জাতীয় খাদ্য। একসময় হাওর এলাকার গরিবের খাবার ছিল এই শালুক। তবে এখন ধনীরাও শখ করে খায়। আবার বিদেশে থাকা স্বজনদের জন্যও এই শালুক পাঠানো হয়। ফলে দিন দিন এর দাম বেড়ে গরিবের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
তবে শালুক আহরণকারীরা ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন। বাংলাদেশের হাওর পরিবেষ্টিত বহু জেলায়ই এই শালুক জন্মে। বিশেষ করে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং, আজিমরীগঞ্জ, মাধবপুর, লাখাই ও নবীগঞ্জ উপজেলার একাংশের হাওর এলাকা বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকে। এসময় শাপলা, শালুক, পানিফলসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদে হাওর পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। বর্ষা শেষে শরৎ এবং হেমন্তের পরে সংগ্রহ করা হয় শালুক, শাপলার ডেপ, পানিফলসহ বিভিন্ন ধরনের মজাদার ফল। এর মধ্যে শালুক খুবই জনপ্রিয়।
সাধারণত: বোরো ফসলের জন্য জমির আগাছা পরিস্কার করার সময় শালুক এবং পানিফল আহরণ করা হয়। বাজারে এই ফলের চাহিদা থাকায় তারা এসব সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। পাইকারি ২০/৩০ টাকা কেজি হিসাবে শালুক বিক্রি হয়। খুচরা বাজারে ৪০/৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
গ্রামে অভাবের সময় অতিদরিদ্র শ্রেণীর মানুষ বিল থেকে শালুক তুলে এনে সিদ্ধ করে ভাতের বিকল্প হিসেবে খায়। আবার বাজারে নিয়ে বিক্রিও করে।
হবিগঞ্জ জেলায় শালুকের অন্যতম পাইকারি বাজার মাধবপুর উপজেলায়। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবারে এর বাজার বসে। পার্শ্ববর্তী জেলা মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের ব্যবসায়ীরা শত শত মণ শালুক নিয়ে আসে মাধবপুরে। পাইকারদের হাতবদল হয়ে সেই শালুক চলে যায় রাজধানী ঢাকা, কুমিল্লা, সরাইল, ভৈরব, নরসিংদী, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
একেকটি শালুকের ওজন ৩০ গ্রাম থেকে ৭০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।
হজমশক্তি বৃদ্ধিকারক এই ফলটি আগুনে পুড়িয়ে কিংবা সিদ্ধ করে খাওয়া হয়। ডাক্তারী মতে, শালুক দ্রুত ক্ষুধা নিবারণের সঙ্গে শরীরে পর্যাপ্ত শক্তিও যোগায়। শালুকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা পিত্তের প্রশান্তিদায়ক, পিপাসা নিবারণ করে।