রাঙ্গামাটিকে বলা হয় বাংলাদেশের রূপের রাণী। তার রূপ সৌন্দর্য পেখম মেলে মাধুর্য্য ছড়ায় সব ঋতুতেই। প্রকৃতির এক অজানা নিবিড় আলিঙ্গনে বাঁধা এই পাহাড় কন্যা রাঙ্গামাটি।
রাঙ্গামাটির গহীন অরণ্য, প্রকৃতির পাহাড়ী রূপ-সৌন্দর্য্যের আকর্ষণ ভ্রমণ পিপাসুদের মন কাড়ে দেখামাত্র। তাই তো প্রকৃতির সে অফুরান রূপসৌন্দর্য উপভোগ করতে ভ্রমণবিলাসীদের ভিড় জমে বছরের সকল ঋতুতেই।
প্রকৃতির আদি সৌন্দর্য সে কার না হৃদয়ে দোলা দেয়। রাঙ্গামাটি পাহাড়ের গহীনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সৃষ্টির আদিম, মানুষের আদেখা, লাখো-কোটী বছরের পুরোনো সে রূপের পসরা। তেমনই অনন্য এক রূপ-সৌন্দর্যের নাম ‘ফুরোমন পাহাড়’। অপার্থিব সৌন্দর্যের এ পাহাড় বিস্ময়ের অভিভুতি ছড়ায় মানব মনে।
এই ফুরোমন পাহাড়ের অবস্থান রাঙ্গামাটি শহরের কাছেই। চাকমাদের ভাষায় ফুরোমনের অর্থ ফুরফুরে মন। এ পাহাড়ের চূড়ায় মন ফুরফুরে হয়ে যায় বলে পাহাড়ের নাম ওরা দিয়েছে ফুরোমন। পাহাড়টির উচ্চতা ১ হাজার ৫১৮ ফুট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,৬০০ ফিট উঁচুতে প্রায় ৪০০ ধাপ খাড়া সিঁড়ি বেয়ে উপরে গেলেই পাওয়া যায় বিশাল এক মরু নির্জনতা।
নির্জন পরিবেশ আর কাপ্তাই হ্রদের বিশাল জলরাশির দেখা মেলে পাহাড় থেকে। এখানকার প্রকৃতির সৌন্দর্য রূপবিনোদন প্রিয় মানব মনকে বিমোহিত না করে পারে না। ফুরোমনের চূড়া থেকে পাখির চোখে দেখা যায় লেকের বিস্তৃত জলরাশি। নীল জলরাশির কাপ্তাই লেক, স্বচ্ছ নীলাভ জল আর বিস্তৃত আকাশ দেখে মনে হতে পারে পাহাড়ই সমুদ্রের তীর। পাহাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমে চট্টগ্রাম শহর, তারই বন্দরে ভাসমান জাহাজের মাস্তুল। তার সঙ্গে দেখা যায় সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক মহামিলন কেন্দ্র।
সবুজ পাহাড় আর নীল আকাশে মেঘের মিতালি ঘটে ফুরোমন পাহাড়ে। চারিদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক, প্রজাপতির ব্যস্ত ছুটে চলা, বুনোপোকাদের স্বাধীন বিচরণ, হাজার বছরের পাতাঝরা গাছের গায়ে হাওয়া লাগার শন শন শব্দের আহ্বান, অপার সে সৌন্দর্যে হারিয়ে যায় মন! অনন্তের সে কোন কাল থেকে এখানে গহীন পাহাড়ের নীরবতা আর বাতাসের স্বর্গীয় খেলা চলে আসছে কে জানে।
এখানে পাহাড় চূড়ায় আছে এক বৌদ্ধ মন্দির। যেনো প্রকৃতির মায়ায় মেঘের দেশে গৌতম বুদ্ধ ধ্যানমগ্ন। এ সৌন্দর্যের মোহনীয় রূপ সে যে আসলেই অপরূপা।