এটি বরিশালের লাকুটিয়া জমিদার বাড়ীর একটি মন্দির। অযত্ন অবহেলায় বাড়ীটি ধ্বংসের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে। জমিদার বাড়ীটি ঝুলে আছে ঠিকই কিন্তু নেই সেই জমিদারী, নেই জমিদারও। রাজা রায়চন্দ্র রায় কর্তৃক উনিশ শতকে নির্মিত এই বাড়িটি বরিশাল বিভাগের একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য বাড়ি। প্রায় ৪শত বছরের পুরোনো এই জমিদার বাড়ী। ইংরেজ আমলে ৪৯ দশমিক ৫০একর জমি নিয়ে বাড়িটি নির্মান হলেও অযত্ন অবহেলায় লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি এখন ভূতুড়ে বাড়ী, পড়ে আছে শুধুই ধ্বংসাবশেষ। বাড়িটির চারদিকের দেয়ালগুলো ধ্বসে পরেছে। দোতলায় উঠার কোনো উপায়ই নেই, বাইরের দিক থেকে উঠে যাওয়া সিঁড়ি ভেঙে আছে। অথচ এই বাড়িটি ছিল এক সময়ের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পীঠস্থান।
এই পরিবারের মানুষদের খ্যাতি ছিলো জগৎজুড়ে। জগতজোড়া খ্যাতির পথ ধরেই তৎকালিন সময়ে বরিশাল শহরে নির্মিত হয়েছিলো ‘রাজচন্দ্র কলেজ’। শেরে বাংলা ফজলুল হক এই কলেজে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। লাকুটিয়ার জমিদারেরা নির্মান করেছিলেন লাকুটিয়া সড়কটি।
খোসালচন্দ্র রায় লিখিত ‘‘বাখরগঞ্জ ইতিহাস গ্রন্থ” থেকে জানা যায়, রূপচন্দ্র রায় ছিলেন এই জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর পৌত্র রাজচন্দ্র রায়ের সময়ে জনহিতকর কাজের কারণে তাদের প্রতিপত্তি আরও বাড়ে। তিনিই মূল জমিদার বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। তাঁর বসানো হাটকেই সবাই বলে বাবুরহাট। তিনি প্রজাদরদি ছিলেন। লাখুটিয়া থেকে বরিশাল অবধি রাস্তা তাঁর আমলেই তৈরি হয়েছিল। বেশ ঘটা করে তিনি রাস উৎসব করতেন। তাঁর দুই পুত্র রাখালচন্দ্র রায় ও প্যারীলাল রায় ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী ছিলেন।
প্রায় ৪শত বছরের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে কোনমতে বাড়ীটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে আমাদের গর্বিত অতীতকে জাগান দিতে বলেই মনে হয।
বাড়ীটির এমন দশা আমাদের বিকৃত রুচি আর দৈন্যতারই সাক্ষ্য বহন করে চলেছে শত বছর ব্যাপী।