1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
মৌলভীবাজারের খাসিয়া জাতিগোষ্ঠী - মুক্তকথা
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন

মৌলভীবাজারের খাসিয়া জাতিগোষ্ঠী

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৭
  • ৭৫৩ পড়া হয়েছে

হারুনূর রশীদ
লন্ডন, ১৫ জুলাই ২০১৭

সারা বিশ্বব্যাপী অনুমান ৩৭০ মিলিয়ন মানুষ বাস করেন যারা আমাদের ভাষায় ‘আদিবাসী’ বলেই আমাদের কাছে পরিচিত। জাতিসংঘের হিসেবে জানা যায় বিশ্বের ৯০টি দেশে এসব মানুষ বসবাস করছেন। দুনিয়ার মোট মানুষের সংখ্যার অনুপাতে এদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫শতাংশ। সারা বিশ্বের এই আদিবাসীগন ৭হাজার ভাষায় কথা বলেন এবং তাদের ৫হাজার নমুনার ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি রয়েছে যা তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনে অনুশীলন করেন। আসন্ন ৯ আগষ্ট বিশ্ব আদিবাসীদের একটি আন্তর্জাতিক দিন। ১৩ সেপ্টেম্বর হলো জাতিসংঘ কর্তৃক আদিবাসী অধিকার ঘোষণার দশম বর্ষপূর্তি দিবস। এ উপলক্ষে আমরা চেষ্টাকরবো বাংলাদেশের আদিবাসীদের নিয়ে লিখতে। তারই সূচনা এই খাসিয়া জনগোষ্ঠীকে নিয়ে প্রতিবেদন।

বিশ্বের এই আদিবাসীদের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ ‘আদিবাসী’ মানুষ আছেন যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন। (Gateway, Hossain, 2003) তারা প্রায় ৪৬টি ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ে বা গোত্রে বিভক্ত এবং এসব সম্প্রদায় নিজেদের এক একটি জাতি বলে পরিচয় দিতে বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাদের সকলেরই নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি ও বিভিন্ন প্রথা-রীতি রয়েছে যা তারা দৈনন্দিন জীবনে পালন করেন। খাসিয়া জাতিগোষ্ঠী ওই ৪৬টি দলেরই অতি গুরুত্বপূর্ণ ও আধুনিক সুবিধাবঞ্চিত একটি জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশে যাদের মূল বসবাস সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার জঙ্গল ও পাহাড়ী এলাকায়। প্রধান প্রধান আদিবাসী দলগুলো, খাসিয়াদের চরিত্র বৈশিষ্টের স্বাতন্ত্র্যতা ও পাহাড়ে জঙ্গলে আনুপাতিক হারে একাকী বসবাসের প্রবণতা এবং তাদের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারার পার্থক্য বিবেচনায় তাদের পৃথক দলের মানব সম্প্রদায় হিসেবে চিহ্নিত করেছে।(Munda, 2002)।
এই খাসিয়া জনগোষ্ঠীর আদিতত্ত্ব বহু আলোচিত একটি বিষয় বাংলাদেশে। এরা কোথা থেকে কিভাবে সিলেটের পাহাড়ী অঞ্চলে আগমন করেছে, আরো বহু জাতিগোষ্ঠীর মত তাদের ইতিহাস আজো কোন গবেষক স্বচ্ছভাবে খোলাসা করতে পারেননি। কেউ বলতে পারে না। এ নিয়ে বহু ঘাটাঘাটি করেও নির্ভরযোগ্য কোন সুরাহা পাওয়া যায়নি।
ইন্ডিয়া মিশন এসোসিয়েশনের ‘জসুয়া প্রজেক্ট’  মতে ‘খাসিয়া’ একটি বর্গীয় নাম। এরা দক্ষিণপূর্ব এশিয়া থেকে বের হয়ে এসে উত্তর-পূর্ব ভারতে বসবাস শুরু করেছিল। এসব খাসিয়াদের বহু গোত্র রয়েছে যেমন- লিংগদো, দিয়েংদো, মারবানিয়াং, সিয়েমলিয়া, লাপাং ও সংকালী। এই সকল গোত্রের বর্গীয় পরিচয় হল ‘খাসিয়া’।  এরা আবার কয়েকটি মাতৃতান্ত্রিক গোষ্ঠী বা বংশে বিভক্ত। যেমন- মওলং, খংউইর এবং সিমলি।
কোন কোন গবেষকদের মতে খাসিয়াগন মঙ্গোলয়েড সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ। খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রাচীন ভারতে বহিরাগত আর্যদের আধিপত্যের সূচনাকালে এই খাসিয়াদের মত জাতিগোষ্ঠির সাথে আর্যদের লড়াই হয়। সে লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে পাহাড়ে বসবাসকারী এসব মানুষ নিরাপদ দূরত্বের বনে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে বসবাস শুরু করে। আর্যদের সাথে সেই লড়াকুদেরই একটি জাতি হল খাসিয়া। তারা চেরাপুঞ্জি ও শিলং অঞ্চল থেকে খাসিয়া পাহাড় ও জয়ন্তিয়া পাহাড়ে নেমে আসে। পরে বাংলাদেশে আসে আসাম থেকে।
আসামের পাহাড়ী অঞ্চলে এই খাসিয়া মানবগোষ্ঠীর আগমন ঘটে ‘ournal Of Humanities And Social Science’ মতে ৫শত বছর আগে তিব্বত থেকে। এখন তারা বাংলাদেশের অন্যতম মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার পথিকৃৎ।
গুরধন নামের একজন গবেষকের মতে প্রস্তর যুগে মালয় উপদ্বীপ ও ছোট নাগপুরে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কিত একটি জনগোষ্ঠী এই খাসিয়াগন।  গবেষক এই গুরদনের মতে খাসিয়াগন ১৬শতকে আসাম থেকে নেমে এসে জৈন্তাপুরে বাসস্থান গড়ে তুলে। এ সময় তারা জৈন্তাপুরে একটি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। অবশ্য খাসিয়া জৈন্তিয়া রাজ্য গঠনের সময় এখনও ইতিহাসের অন্ধকারে রয়ে গেছে। কোন কোন গবেষক বলেছেন খাসিয়া জয়ন্তিয়া রাজ্য গঠন হয়েছিল ১৫শ শতাব্দিতে। রাজ্য গঠনের এ সময়ে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের কতিপয় এলাকা দখল করে রাজ্যের আওতায় নেয়া হয়। ১৮৩৫ সালের পরে এই খাসিয়া জৈয়ন্তিয়া রাজ্য বৃটিশদখলদাররা দখল করে নেয়। এ সময় খাসিয়াগন প্রাচীন সিলেটের বহু পাহাড়ী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে বসতি গড়ে তোলে। সিলেট ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন পাহাড়ী বনাঞ্চলে তাদের বর্তমান আবাস সেই ছড়িয়ে পড়ারই আদিরূপ। বর্তমানে তাদের ঘনবসতি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায়।
গবেষক দত্ত খাসিয়াদের বর্ণনা করেছেন পালি মঙ্গোলয়েড বলে, যারা অষ্ট্রিক ভাষায় কথা বলে।
খাসিয়ারা আকারে বেটে-খাটো, চেপ্টা নাক এবং মুখ ও দাঁতের পাটি একটু উঁচু, চোখ উপরের দিকে টানা ছোট ছোট কালো। গায়ের রং ফর্সা। তারা কৃষিজীবী। পান চাষ তাদের খুব প্রিয়। তাঁদের উৎপাতিত পান খাসিয়া পান হিসেবে সারা বাংলাদেশে মশহুর। বাঙ্গালীগনের মত ভাত ও মাছ তাদের প্রধান খাদ্য। পাশ্চাত্য সংগীত চর্চ্চা তাদের খুবই প্রিয়। তাদের মাতৃকেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষ কোন সম্পত্তির মালিক হতে পারে না। পরিবারের কনিষ্ঠ কন্যা বুনিয়াদি সম্পত্তির মালিকানা পায়। বিয়ের পর পুরুষরা শ্বশুরবাড়ী গিয়ে উঠে। খাসিয়া মহিলারা সংসার ও পরিবারের আর্থ-সামাজিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। মহিলারা খুবই স্বামীভক্ত ও পরিশ্রমী হয়ে থাকে।
আধুনিক বিশ্বে বিশেষ করে বাংলাদেশে খাসিয়াগন শুধুই পাহাড়ী কৃষিক্ষেতে আটকে থাকেনি। অনেকেই শিল্প কর্মে ও আমলা হিসেবে উচ্চ সরকারী কাজে এগিয়ে এসেছে।  চারিত্রিক দিক থেকে তারা খুবই নিরীহ প্রকৃতির। খাসিয়া জনগোষ্ঠীতে বিপুল পরিমানে রয়েছেন খৃষ্ঠীয় ধর্মাবলম্বী। কিছু কিছু হিন্দু ও মুসলমানও আছেন। খাসিয়া মহিলাদের বিবাহের মধ্য দিয়েই ওই সমাজে হিন্দু ও মুসলমানের ভিত গড়ে উঠেছে।
খাসিয়াগন মনে করেন, দুনিয়া সৃষ্টির আগেই সৃষ্টিকর্তা তাদের তৈরী করেছিলেন। অনুমান সমগ্র বাংলাদেশে প্রায় ৯০টি খাসিয়া গ্রাম রয়েছে যেখানে অনুমান ২৫ হাজারেরও বেশী খাসিয়া মানুষ বসবাস করেন। তারা মূলত গভীর জঙ্গলে বাস করতে বেশী পছন্দ করেন।  বৃহত্তর সিলেটের পাহাড় জঙ্গলে ৭১টি খাসিয়া পুঞ্জি রয়েছে। এর মাঝে ৬০টি পুঞ্জি রয়েছে কুলাউড়া ৩৮, বড়লেখা ১১, শ্রীমঙ্গল ৭ ও কমলগঞ্জে ৪টি।
উপজাতিতো নয়ই আদিবাসী পরিচয়কেও মন থেকে গ্রহন করেননি খাসিয়াগন। তাদের সাধারণের মতে তারা একটি বিশেষ নমুনার নৃগোষ্ঠী এবং একটি জাতি। কাছাকাছি পঞ্চম-ষোড়শ শতকের ইতিহাস বলে তাদের আদি বাসস্থান আসামের জঙ্গলময় পাহাড়ী অঞ্চল। প্রাচীন সেই আসামের অংশ হিসেবে বৃহত্তর সিলেট  ও মৌলভীবাজারে খাসিয়া জনগোষ্ঠি বহুকাল পূর্ব থেকেই বসবাস করে আসছে।
জানা যায়, মৌলভীবাজার তথা বৃহত্তর সিলেটের খাসিয়াগন সিনতেং(synteng) গোত্রভুক্ত জাতি।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT