1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
জীবন লিপির হারানো সময় - মুক্তকথা
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৬:০০ অপরাহ্ন

জীবন লিপির হারানো সময়

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : রবিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৮
  • ৪৬৭ পড়া হয়েছে

হারুনূর রশীদ।।

জীবনে কখনও পুরো পরিকল্পনা করে ঘর থেকে বের হতে পারিনি। সব সময়ই কোন না কোন সমস্যা নিয়ে আমাকে বের হতে হতো। সব সময়ই চেষ্টা করতাম জীবনটাকে পরিকল্পিত করার। কত দিনপঞ্জিকা বা ‘ডায়রী’ খরিদ করেছি কিন্তু কোনটাই পুরো কাজে লাগাতে পারিনি। প্রথম প্রথম দুয়েকমাস কিছু হয়তো লিখলাম। পরে আর সে হয়ে উঠতো না। অনেক চেষ্টা করেও সে অভ্যেস গড়ে তুলতে পারিনি।
এখনও প্রতিবছর একটি করে ‘ডায়রী’ খরিদ করি। বন্ধু-বান্ধব পরিচিতজনদের কাছ থেকে আরো বাড়তি কিছু ‘ডায়রী’ উপহার পাই। কিন্তু প্রথম প্রথম দু’একমাস ব্যবহারের পর আর লিখি না। অবশ্য লিখে রাখার মত তেমন কোন ব্যক্তির সাথে দেখাতো আর হয় নাই কোনদিন কিংবা তেমন উল্লেখকরার মত কোন ঘটনার সাথে জড়িত থাকলেতো লিখতে যাবো। এমন হয়ে উঠতো না। সম্ভবতঃ তাই ডায়রী লিখা হয়ে উঠতো না। তবে একটি বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি, আজ যখন বলছি লেখার মত কোন ঘটনার সাথে জড়িত ছিলাম না বা কোন ব্যক্তির সাথে পরিচয় ঘটেনি অতএব কি লিখবো। কিন্তু আজ ভাবি অনেক ঘটনা, অনেক লোক যাদের তখন মূল্য দেইনি কিংবা লিখার মত ঘটনা বলে মনে করিনি, তা ছিল আমার সম্পূর্ন ভুল। এ ছিল আমার অজ্ঞতা। আজও সে ভুল থেকে মনে হয় বের হয়ে আসতে পারিনি। কত সে ঘটনা!
সে ছিল ১৯৫৭ সাল। মৌলভীবাজার সরকারী বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ফেল করি। কেনো জানি নিজে মেনে নিতে পারছিলাম না। নিজের অবুঝ মন থেকেই ঠিক করলাম প্রধান শিক্ষক সাহেবের বাসায় গিয়ে বলবো আবার আমার পরীক্ষা নিতে। গিয়েছিলামও! আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী। সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের এই প্রধান শিক্ষককে চেনে না এমন মানুষ তখনকার মৌলভীবাজার শহরে কেউ ছিলই না। রাস্তার ঝাড়ুদার থেকে শহরের প্রধান কর্তা এসডিও সাহেব পর্যন্ত সকল মহলের কাছে এই প্রধান শিক্ষক এক মূর্তিমান দেবদূত ছিলেন। অবশ্য বহুজনের কাছে তিনি যমদূতও ছিলেন। বিশেষ করে আমরা ছাত্র, শিক্ষক ও স্কুল কর্মচারী অনেকের কাছেই তিনি মূর্তিমান যমদূতই ছিলেন। ভালদের সাথে তিনি যেমন অতীব নরম মনের মানুষ ছিলেন আবার কোন ধরনের নিয়মভঙ্গের কারণে কারো প্রতি রাগের সময় তিনি ঠিক চন্ডাল মূর্তি ধারণ করতেন। কোন অবস্থাতেই নিয়মভঙ্গকারীকে তিনি কোনরূপ সহানুভুতি দেখাতেন না। দুষ্টের দমনে তার জুড়ি ছিল না। একবার হলো কি? সেই সময়ের এসডিও সাহেব, হেড মাষ্টার সাহেবকে না জানিয়ে চলে আসলেন স্কুল পরিদর্শন করতে। তখন বিদ্যালয়ের পাঠদান শুরু হয়েগেছে।
ওই সময় নিয়ম ছিল পাঠদান শুরু হবার কিছু সময় আগেই বিদ্যালয়ের উত্তর-দক্ষিনের দু’টো প্রধান প্রবেশ পথে তালা লাগিয়ে দেয়া হতো যা’তে বহিরাগত পথচারী স্কুলের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করতে না পারে। আবার মধ্যাহ্নভোজের (টিফিনের সময়) সময় তালা খুলে দেয়া হতো। এ সময় শেষ হয়ে গেলে আবার লাগিয়ে দেয়া হতো। আবার পাঠদান শেষে তালা খুলে দিয়ে রাত ৮টা অবদি খুলে রাখা হতো পথচারী মানুষজনদের জন্য। স্কুলের সার্বক্ষনিক রক্ষণাবেক্ষনকারী (কেয়ারটেকার) বৃদ্ধ অবসর প্রাপ্ত সারেং আলীম উল্লাহ সে কাজ করতেন।
এসডিও সাহেব বিদ্যালয় দেখতে এসে ফটকে তালা দেখে তার সঙ্গীয় হুকুম তামিলকারীকে একটু জোরে ডাক দিয়ে জানান দিতে আদেশ দিলেন। সে মোতাবেক তার কর্মচারী একটু জোরে ডাক দিয়ে এসডিও সাহেবের আগমন বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল। বিদ্যালয়ের কার্যালয় ফটকের কাছাকাছি থাকায় ডাক শুনে আলীম উল্লাহ এসে দেখলেন ফটকে এসডিও সাহেব দাঁড়িয়ে। ভেতরে আসতে চান। দৌড়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে জানালেন। আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী একটুও নড়লেন না। আলীম উল্লাকে বললেন, গিয়ে বলো এখন পাঠদান শুরু হয়েগেছে। আর পরিদর্শনে আসতে হলেতো আগে জানিয়ে আসতে হয়। এমন হঠাৎ করে পরিদর্শনের কিছুতো বিদ্যালয়ে ঘটেনি। যাও বলে আসো। আলীমুল্লারও যেই হুকুম সেই কাজ। এসডিও সাহেবতো রাগে অগ্নিশর্ম্মা। মামুলি প্রধান শিক্ষকের এতো দেমাক! তিনিও ছাড়বেন না। প্রধান শিক্ষকও হুকুম পাল্টাবেন না, তার মতে অযাচিত, অসময়, অহেতুক পরিদর্শন বিদ্যালয়ের পাঠদানে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এতে তার চাকরী গেলেও তিনি এমন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না। এমন আমলাতান্ত্রিক মনোভাবের তিনি বিরোধী। অবশেষে এসডিও সাহেবকে ফিরে যেতেই হলো। এ নিয়ে শহরে সে কি গুঞ্জন! কেউ বলে এবার হেড মাষ্টার বুঝবেন! কেউ বলে বাঘের বাচ্চা ওয়াহেদ চৌধুরী! বেশ অনেক দিন এর রেশ ছিল শহরে। মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে সেই ঘটনা কত রং বদলিয়ে! এখনও যদি যে কোন তিন জনকে জিজ্ঞাসা করা হয় তা’হলে তিন নমুনায় সেই কাহানী শুনবেন। আমি স্কুলের একজন ছাত্র হিসেবে এখনও জীবন্ত সাক্ষী হয়ে আছি।
অনেক অনেক দিন পরের ঘটনা। আমরা চার-পাঁচজন কলেজ পড়ুয়া বন্ধু আমাদের সুপরিচিত ‘ম্যানেজার ষ্টল’র আড্ডায় বসে চা খাচ্ছি। এমন সময় নতুন আরো কয়েকজন এসে যোগ দিল। তাদের মধ্যে একজন আমাদেরই সমসাময়িক, তবে খুব চিনি বলে মনে করতে পারছিলাম না। আমাদের আলাপের সূত্র ধরে স্কুল জমানার কাহিনী বয়ানে শরিক হলো। সে বলতে শুরু করলো আমাদের শ্রদ্ধেয় সেই প্রধান শিক্ষকের এসডিও তাড়ানোর কাহিনী। এমন রং মাখিয়ে বলতে লাগলো যে একেবারে বেত্র হাতে প্রধান শিক্ষক এসডিওকে তাড়িয়ে দিয়ে আসলেন। আমরা পুরনোরা বসে বসে তার তৈরী কাহিনী শুনলাম। অবশ্য আমাদেরই একজন তাকে একটু শুধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে রীতিমত অহেতুক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। পরে অবশ্য ছেলেটি বুঝতে পেরেছিল যে তার বলা কাহিনী সঠিক নয়। কিন্তু অ-কপটে  সে বানিয়ে বলেছিল আমাদেরই কাছে যারা স্বচক্ষে দেখার বা স্বকর্ণে শুনার ভাগ্য হয়েছিল।
কিন্তু সে সময় কিংবা তারও পরে এ ঘটনা ‘ডায়রীতে’ লেখার প্রয়োজন বোধ করিনি।
তবুও লিখতাম নিজের কথা, কিছু ছড়া, দু’একটি গল্পের খসড়া। তাও একসময় আর হয়ে উঠতো না। পারিবারিক কাজ-কর্ম এমনভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকতো যে কোন লেখা অসমাপ্ত রেখেই বের হতে হতো। বেশী করে যা লিখতেই হতো সে ছিল সংবাদ। পত্রিকার জন্য সংবাদ। এই সংবাদ লিখে লিখেই দিন গিয়ে রাত হয়ে আসতো। সব সংবাদতো আর পত্রিকা ছাপতোও না। কিন্তু আমাকে লিখতে হতো। লিখা ছাপা হলে কিছু টাকা পাওয়া যেতো। তাই সংবাদ লিখতে ভুল হতো না। আর এই সংবাদ লিখতে গিয়ে একসময় স্থানীয়ভাবে মোটামুটি একটা পরিচিতি পেয়েছিলাম। জীবনে অর্জন এতোটুকুই।
এই সংবাদ হিসেবে কত লিখেছি তার কোন হিসেব দেয়া সম্ভব নয়। পাকিস্তানী আমলের চিত্রাকাশ, চিত্রালী, ঝিনুক, অর্ধসাপ্তাহিক আওয়াজ, জনবার্তা, স্বাধীনতার পর হককথা, গণকন্ঠ, দি পিপলস সহ আরো অনেক পত্র-পত্রিকায় লিখেছি। এগুলো সংগ্রহ করে রাখতে পারলে আজ বিশাল আকারের কয়েকটি বই হয়ে যেতো।
দেশ স্বাধীন হবার পর কিছু কিছু সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছিলাম। ছোট-খাটো ৩খানা বইয়ের পান্ডুলিপিও রচনা করতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু ওই যে কথায় আছে না “অভাগা যে ডাল ধরে সে ডাল ভেঙ্গে পড়ে”! আমার বেলায়ও ঘটলো তাই। ১৯৮৪ সালের বন্যা আমার জীবনের সকল সংগ্রহ ভাসিয়ে নিয়ে গেল। লেখা-লেখি জগতের সকল সম্বল কেড়ে নিয়ে একেবারে নিঃস্ব করে দিয়ে গেছে। (আরো লিখবো)
লণ্ডন, রোববার, ২২শে এপ্রিল ২০১৮সাল

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT