1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
দু'জন সাদাব আর তাপসী - মুক্তকথা
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৪ অপরাহ্ন

দু’জন সাদাব আর তাপসী

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : বৃহস্পতিবার, ৩ মে, ২০১৮
  • ৭৪২ পড়া হয়েছে

হারুনূর রশীদ।।

খুবই আচমকাই দেখা। আমার ছোট বোন নার্সারী শিক্ষিকা ফাওয়া নাজনীন হাওয়াই বার্তায় (‘টেক্সট’) একটি তার্কিস রেস্তোঁরায় নিমন্ত্রণ পাঠালো। নিমন্ত্রণের সাথে জানালো বাংলাদেশ থেকে তার এক শ্যালক ও তার স্ত্রী খুব সংক্ষিপ্ত সফরে লণ্ডন এসেছে। তাদের উদ্দেশ্যেই এই নিমন্ত্রণের ব্যবস্থা।
আমি আজীবন খাবার-দাবারের খুব ভক্ত। যৌবনে খানা-খাদ্যের বিষয়ে এলাকায় আমরা ক’জনের বেশ নাম-ডাকও ছিল। সে ভিন্ন কেচ্ছা। সময় সুযোগ হলে আপনাদের শুনিয়ে দেবো। অবলিলায় নিমন্ত্রণ রক্ষা করলাম। সন্ধ্যায় পুরো সংসার নিয়ে “সালানা”য় হাজির। সাথে আমার একমাত্র নাতনী “সুহা ঈরা”কে নিতে ভুলিনি। কেনো জানিনা আমার নাতনী আমার কাছে এতো প্রিয়! ওর সামান্য একটু ককিয়ে উঠাকে আমি সহ্য করতে পারি না। মনে হয় কেউ যেনো আমাকেই আঘাত করছে।

“সালানা” খুব সম্ভবতঃ তুর্কী বা মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশের শব্দ সংস্কৃতি। হাওয়াই যন্ত্র ঘেটে এর একটি অর্থ পাওয়া গেল। সূর্য্য! ভাবনায় আসলো রেস্তোঁরার নাম আবার সূর্য্য হয় কি করে। সম্ভবতঃ সূর্য্যের মত খুব তেজী ও গরম তাদের খাবার। আর সেখান থেকেই রেস্তোরাঁটির নাম রাখা হয়েছে “সালানা”।
আমরা সকলে আসন গ্রহন করলাম। কাকতালীয়ভাবে আমার নাতনীকে দেখার উদ্দেশ্যে মহিলা অতিথি আমার এক পাশে এসে বসলেন। ইতিমধ্যেই সম্পর্ক জেনে নিয়েছি। তিনি আমার এক শালিকা।  তারণ্যের উদ্দীপনা, বুকভরা অফুরান আশা আর মনের সাহস নিয়ে বিদেশের মাটি ছেড়ে জন্মভূমিতে কিছু করার উদ্দীপ্ত বাসনা নিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন এই দুই তরুণ তরুনী। চোখে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন। দেশকে নিয়ে নিখাদ বিশ্বাস। দেশ এগিয়েছে, এখনই সময় অগ্রযাত্রার পালে হাত লাগিয়ে তাকে আর একটু সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া। যাতে নিজের কিছু হয়। দেশের উত্তোরনের অর্থইতো মানুষের উত্তোরণ। নিজেসহ দেশের মানুষকে স্বাচ্ছন্দের দিকে হাতছানি দিয়ে নিয়ে যাওয়ার এইতো সময়। এমনই দৃঢ বিশ্বাস আর মনোবল থেকে তারা দু’জন কানাডা আর অস্ট্রেলিয়ার মত দেশ পেছনে রেখে  লেখাপড়ার শেষে বুকে অসীম সাহস নিয়ে ফিরেছেন দেশে। হয়তো মনের গহীণে কাজ করছে সেই চোরাবালি বাসনা, কিছু করতে না পারলে ফিরে যাবার রাস্তাতো খোলাই আছে। কারণ তারা দু’জন সমৃদ্ধ দুই দেশের বাসীন্ধা।
তাপসী সরওয়াত। ব্যবসার উপর স্নাতক করেছেন সিডনীর কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ব্যবসায়ী বাবার বড মেয়ে কেনাডায় আবাসিক। জীবনের ৫ বছর মা-বাবার সাথে কেনাডায় কাটিয়েছেন তাপসী। এর পর লিখা-পড়ার উদ্দেশ্যে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। জীবনের সাত বছর সময় কাটিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায় চাকুরী ও লিখা-পড়ায়। অস্ট্রেলিয়ার কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখা-পড়ার সূত্রে পরিচয় সাদাবের সাথে।
সৈয়দ সাদাব। মূলতঃ হবিগঞ্জের মানুষ। জন্ম সিলেটে ও বড় হওয়া রাজধানী ঢাকায়। বাবা অবসর প্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব। সাদাবও অস্ট্রেলিয়ার একই বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখা-পড়া করেছেন। সে সূত্রেই সাদাব-তাপসীর পরিচয়। পরিচয় থেকে পরিণয়। সাদাব লিখা-পড়া শেষ করে ঢাকায় ফিরে আসেন। ফিরে আসেন তাপসীও। তবে চাকরী নিয়ে। “ইনফরমা অস্ট্রেলিয়া” নামের একটি কোম্পানীর সমন্বয়ক হিসেবে ঢাকা থেকে কাজ শুরু করেছেন। “ডিজিটেল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ” হিসেবে স্বামীও তাকে কাজের ফাঁকে ফাঁকে সহায়তা করেন। তাপসী জানান কাজটি চুক্তিভিত্তিক। চুক্তির সময় শেষ হলে কোম্পানী প্রয়োজনে নতুনভাবে চুক্তি করবে।
হাসি-খুশী মুখের সাদাব চাকুরে। নিষ্কলুষ আমোদ-প্রমোদে সময় কাটাতে ভাল বাসেন। কাজের ফাঁকে ডিজিটেল মার্কেটিংয়ের কাজে স্ত্রীকে অবশ্য সহায়তা করেন। দেশ দুনিয়ার খুব একটা খবর রাখার প্রয়োজন মনে করেন না।
তাপসী কিন্তু একটু ভিন্ন। ব্যবসার পাশাপাশি সমাজ ও দেশ-দুনিয়ার খবর রাখেন। মুক্ত বিহঙ্গ মনের তাপসী প্রগতিশীল ঘরানার মানুষ বলে আপাততঃ মনে হয়েছে। কাজের পাশাপাশি সমাজের হাসি-কান্নায় শরিক হতে আগ্রহী। কান পেতে শুনেন শাহবাগ চত্তরের চিৎকার আর দীর্ঘশ্বাস। আলাপচারিতায় তাপসী জানান, দেশ সামনের দিকে যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সে এগিয়ে যাওয়া সকল মানুষের নয়। একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষ।
আলাপের শুরুতেই বুঝতে পারলাম তাপসী গভীরভাবে সমাজ সচেতন কন্যা। তাই ইচ্ছে করেই আলাপ জুড়লাম। রাতের খাবারের টেবিলেই অনেক আলাপ হলো। জানতে চাইলাম বাংলাদেশের চলমান অবস্থা নিয়ে। এক লহমায় উত্তর দিলেন, আমাদের গড় আয় বেড়েছে কিন্তু নিচের দিকের মানুষের কোন উন্নতি হয়নি। ওরা যে তিমিরে ছিল বলতে গেলে সে তিমিরেই আছে এখনও। বিভিন্ন নমুনার চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে আমাদের ধনবানরা গড়ে উঠেছেন। বিশেষ করে নামে-বেনামে ব্যঙ্কলুঠের টাকায় মূলতঃ আমাদের ধনবানরা গড়ে উঠেছেন। তারা না বুঝেন ব্যবসা, না বুঝেন সমাজ, রাজনীতি কিংবা অর্থনীতি। জাতীয় পুঁজি গড়ে তুলতে হবে এই দোহাই দিয়ে এরা একের পর এক ব্যাঙ্কের কলিজায় পেরেক মেরেই চলেছেন।
তাপসী ধর্ষণ বিষয়ে খুবই স্পর্শকাতর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের মত আমাদের দেশেও ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা খুবই প্রয়োজন। শুধু কথা বললেই হবে না, মৃত্যুদণ্ডের আইন করে এই আদিম বর্বরতার লাগাম ধরে টান দিতে হবে।
চাকরীর ফাঁকে দু’জনেরই ইচ্ছে হয় ভারত ঘুরে দেখবেন। কিন্তু হাতে সময় একাবারেই নাই। এতো অল্প সময়ে ভারতের ভিসাই পাবেন না। ভিসা পেতে দীর্ঘ সময় লাগে। দ্বিতীয় পছন্দ লণ্ডন দেখার। খবর নিয়ে জানলেন লণ্ডনের ভিসা পেতে সময় একেবারেই লাগবেনা। যেই চিন্তা সেই কাজ। লণ্ডনের ভিসা নিয়ে এক সপ্তাহের জন্য লণ্ডন ভ্রমণে এসেছেন। মাঝে একদিনের জন্য প্যারিস নগরীরও কিছুটা স্বাদ উপলব্দিতে নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ৩রা মে দেশের উদ্দেশ্যে ফিরে গেছেন।  তাপসী-সাদাবরা ভ্রমণের বুকভরা আনন্দ নিয়ে ফিরে গেছেন দেশে। আমাদের জন্য রেখে গেলেন জীবনের একগুচ্ছ স্মৃতি!
লণ্ডন, বৃহস্পতিবার
৩রা মে ২০১৮সাল

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT