1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
পেছন ফিরে দেখা - মুক্তকথা
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৫:১৭ অপরাহ্ন

পেছন ফিরে দেখা

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
  • ৪৩৪ পড়া হয়েছে

হারুনূর রশীদ
(২)

আব্দুর রহমান খাঁ। শুনেছি বনেদী খাঁ পরিবারের সন্তান ছিলেন। গাঁয়ে সকলেই তাকে রমানখাঁ বলে ডাকতো। বাবার নাম ছিল আছালত খাঁ। আমরা তাকে দেখিনি। তবে বাবা ও মা-নানীর কাছে তার গল্প শুনেছি। আছালত খাঁ না-কি ঘোড়ায় চড়ে বাড়ী থেকে বেড় হতেন। তখনতো আমাদের দেশের গাঁ-গেরামে পায়ে হাটাই ছিল যোগাযোগের মূল ভরসা। এর পর ছিল জলে নৌকা আর স্থলে ঘোড়া বা গরুর গাড়ী। সম্ভ্রান্ত মানুষদের জন্য ছিল মানুষের টানা পালকি। বছন্দরের দাসেরা ছিল সে পাল্কির বাহক। এই পাল্কি চালিয়ে দাসপরিবারের দুই প্রজন্মের জীবন চলতে দেখেছি।
আছালত খাঁ তার ঘোড়ায় চড়ে রাস্তায় বের হলে পাথচারীরা রাস্তার কিনারে দাঁড়িয়ে তাকে পথ ছেড়ে দিত। এতই শক্তিধর আর প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। তার স্ত্রীকে আমরা অনেকেই দেখেছি, তার শেষ বয়সে। তার নাম জানার সুযোগ হয়নি কোন দিন। আমাদের প্রতিবেশী সকলেই তাকে মিছিলের-মা বলে ডাকতেন। আশ-পাশ বাড়ীর বহু মানুষই তাকে বেশ মায়ার চোখে দেখতেন। গায়ের রং তার কালো ছিল বটে কিন্তু চেহারার গঠনে বুঝা যেতো বয়সের সময় সুন্দরী মহিলাই ছিলেন। সবসময় নীল রংয়ের শাড়ী পড়ে থাকতেন। তিনি বাড়ীতে ছাগল পোষতেন। প্রায়ই তার ছাগল আমাদের বীজচারা জমির রবিশষ্যক্ষেত নষ্ট করে দিত।

আছালত খাঁ সাহেবের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে ছিলেন। বড় ছেলে আব্দুছ ছোবহান খাঁ আর ছোট ছেলে ছিলেন আব্দুর রহমান খাঁ। তিনি নায়ে আসা ছোট-বড় সওদাগরদের ঘাটমাঝি হিসেবে কাজ করতেন।  ধান-চালের ব্যবসার মুৎসুদ্দি আর সংগ্রাহকের কাজও তিনিই  করতেন। তাদের ধান সংগ্রহে ওজন মাপ থেকে শুরু করে সকল কাজে পেশাদারের মত সহায়তা করতেন। ধান সংগ্রহে যখন বের হতেন তখন সবসময় তার সাথে ধান ওজনের এক প্রস্থ বহনযোগ্য দাঁড়িপাল্লা বগলে বা কাঁদে রাখতেন। কোন কোন সময় এ দাঁড়িপাল্লা বহনের একজন বাহকও রাখতেন তিনি। সম্ভবতঃ যে ঋতুতে রোজগার বেশী হওয়ার সম্ভাবনা থাকতো সে সময় অনুমান করে বাহক জোগাড় করতেন। এটি তার ব্যবসাই ছিল। এ দিয়েই তার সংসার চলতো। তাই গ্রীষ্ম, শীত-বসন্ত আর শরৎ-হেমন্ত ফিরে এলে তিনিও কেমন কেতাদুরস্ত লুঙ্গিপড়ে কাঁধে তিন জেবের নিমা ঝুলিয়ে পেখম ধরে নদীর ঘাটে গিয়ে নাইয়েদের সাথে তাস খেলায় বসতেন। খেলা শেষে সওদাগরদের নিয়ে দলবেঁধে  ধান সংগ্রহে বের হতেন।
গ্রামে তখন কাজ বলতে ক্ষেতে কৃষি আর বাড়ীর পাশঘিরে থাকা বীজচারা ভূমিতে রবিশষ্য ফলানোর কাজ। নিম্নবিত্ত ঘরের মেয়েরাও রবিশষ্য ফলানোর কাজে শরিক হতো। খাঁ সাহেবের বাড়ীর সামনেই ছোট একখণ্ড বীজচারা ছিল। সে চারাভূমিতে রহমান খাঁ সাহেব বেশ কিছু রবিশষ্যের চাষ করতেন। এতে করে সংসারের শাক-সব্জির যোগান হয়ে যেতো। কিন্তু সর্বনাশা নদী একসময় সে জমিখণ্ড ভেঙ্গে নদীতে নিয়ে গেলো। এ ছিল গোটা খাঁ পরিবারের অর্থনীতিতে বিরাট ধরনের এক আঘাত। রহমান খাঁ মোষড়ে পড়লেন। এখন কি করবেন। এদিকে ঘরের পোষ্য বেড়েছে। সবকিছু বাদ দেয়া যায় কিন্তু পেটে ভাত দেয়াতো বাদ দেয়া যায় না। জীবন চলতে থাকে। চলার পথে কষ্ট বেড়ে যায়। আব্দুর রহমান খাঁ এখন আর পাল্লা বহনের বাহক নিয়ে চলেন না। নিজেই পাল্লাবগলদাবা করে সওদাগরদের সাথে বাড়ী বাড়ী গিয়ে মেপে ধান সংগ্রহ করে দেন। রহমান খাঁ এখন মধ্য বয়সে। সংসারে মা, স্ত্রী আর দুই মেয়ে দুই ছেলে।
খাঁ’দের গ্রামে বহু পুরানো একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। পরে শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য অপর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। যা আমার মামাবাড়ীর পুকুরের দক্ষিণ-পশ্চিম তীরে একখানা চৌচালা টিনের ঘরে ছাত্রীদের নিয়ে পাঠদান চলতো। সেই স্কুলের পড়ুয়া ছাত্রীদের বাড়ী থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসার জন্য একজন চৌকিদারনী ছিলেন। তিনি পশ্চিমের চার-পাঁচ গ্রামের বাড়ী বাড়ী গিয়ে মেয়েদের নিয়ে আসতেন। ওই বালিকা স্কুলে একজন মহিলা শিক্ষিকা ছিলেন। গ্রামে একটি ডাকঘর আছে। সবমিলিয়ে একজন পিয়ন, একজন চৌকিদারনী, একজন গ্রাম পঞ্চায়েতের চৌকিদার, দু’টি স্কুলের চারজন শিক্ষক, গ্রামের দু’জন শহরে গিয়ে চাকরী করেন। এই ছিল গ্রামের চাকুরী সংস্থান। বাদ বাকী সকলেই কৃষিকর্মী।
আব্দুর রহমান তার যৌবনে আসামে রেললাইন নির্মাণকর্মী হিসেবে বেশ কয়েকবছর কাজ করেছিলেন। ওই সময় আসামেরই এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করে গ্রামে নিয়ে আসেন। এতো পর্দানশীল ও অমায়িক ছিলেন ওই মহিলা যে আমাদের মত শিশু-কিশোরদেরও তিনি আপনি বলে সম্ভোধন করতেন। খুব নিরীহ গোছের পাহাড়ী অঞ্চলের মহিলা। শ্যামলা রংয়ের বেশ লম্বা বলিস্ট শরীরের খুব সুন্দরী মহিলা ছিলেন তিনি। কোনদিনই তার নাম জানার সুযোগ হয়নি। খুব গোছালো ছিল তাদের সংসার।
কুঁচকুঁচে কালো ছিল আব্দুর রহমান খাঁ’এর গায়ের রং। তিনি তার মায়ের রং পেয়েছিলেন। চরিত্রের দিক থেকে আব্দুর রহমান খাঁ ছিলেন খুবই উগ্র মেজাজের মানুষ। তার চোখ দু’টি সবসময় লাল হয়ে থাকতো।  কঠোর পরিশ্রমি ছিলেন। সারাদিন নাইয়েদের সাথে ধানওয়ালাদের বাড়ী বাড়ী ঘুরে ধান সংগ্রহ করে মেপে দেয়াই ছিল তার মূল ব্যবসা। খুব ভালই চলছিল তার ব্যবসা। ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ন, পৌষ,  মাঘ ও ফাল্গুন বছরের এ সাত মাস ধান সংগ্রহের সময়। আব্দুর রহমানেরও ব্যবসা এ সাতমাস ঘিরে। বছরের সাত মাস খুব ব্যস্ত সময় কাটে। বাকী পাঁচ মাস বসে বসেই কাটানো।(আরো আছে)
লন্ডন, বুধবার
২৭শে  সেপ্টেম্বর ২০১৭

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT