1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
পেছন ফিরে দেখা - মুক্তকথা
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৮ পূর্বাহ্ন

পেছন ফিরে দেখা

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : বুধবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৮
  • ৪৮৫ পড়া হয়েছে

(৩)

হারুনূর রশীদ।।

দিন যায়, দিন আসে। দেশের মানুষের মনে স্বাধীনতার ঢেউ লেগেছে। পাকিস্তানী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দেশ ফুঁসে উঠছে। এর আগেও এমন ঘটেছে অনেক। মিলিটারী আয়ূব খাঁ সামরিক শাসক থেকে প্রেসিডেন্ট হতে গিয়ে মৌলিক গণতন্ত্র নাম দিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। এ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিজের কিছু মানুষ তৈরী করেন আয়ূব খাঁ। দেশের পঞ্চায়েত ও সরপঞ্চ প্রথা বিলুপ্ত করে ইউনিয়ন পদ্ধতির কথা ঘোষণা দিয়েছেন। নতুন এ নির্বাচনী পদ্ধতিতে মানুষ একেবারেই অভ্যস্ত নয়। আয়ূবের উদ্দেশ্য এর মাধ্যমে পূর্ববাংলায় কিছু জিহুজুর তৈরী করে তার সামরিক ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করা। তাই প্রবর্তন করেছেন মৌলিক গণতন্ত্র নামের এক জগাখিচুরী পদ্ধতি। এটি না গণতন্ত্র না স্বৈরতন্ত্র। তবে অনেকটা স্বৈরতন্ত্রের কাছাকাছি।
কিন্তু এবার মনে হচ্ছে অবস্থাটা অনেক ভিন্ন। আওয়ামীললীগ নেতা শেখ মুজিবকে জেলে দিয়েছে আয়ূব খানের সরকার। এ নিয়ে দেশে তোলপাড় চলছে। দেশে নতুন নতুন রাস্তাঘাট হতে শুরু করেছে। এখন দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত অবদি বাস-ট্রাক চলাচল শুরু হয়েছে। নায়ে এখন আর নাইওরী যায় না। গাড়ীতে করে দিনের দিন যাওয়া আসা করতে পারে। ধানের জন্য নাও নিয়ে আসতে হয় না। গাড়ীতে এসে ধান কিনে ট্রাকে তুলে সাথে সাথে দেশের এ মাথা থেকে ওই মাথায় নিয়ে যাওয়া শুরু হয়ে গেছে। এই সাথে নদীও পলে পলে ভরাট হতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে রহমান খাঁয়ের সুদিন হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। চোখের সামনেই দেখতে দেখতে ধানের ব্যবসা কেমন হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ রহমান খাঁয়ের করার কিছুই ছিলনা। রহমান খাঁ জীবনে তেমন কিছুই শিখতে পারেননি। সেই বাল্যে গ্রামীন মক্তবে গিয়েছেন। বিদ্যা বলতে এতোটুকুই। ইংরেজ রাজত্বের ছোঁয়া দেশের গ্রামে-গঞ্জে লাগলেও রহমান খাঁ’দের গাঁয়ে তখনও কোন স্কুল গড়ে উঠেনি। যা-ও একটা শুরু হয়েছিল রায়েদের বাড়ীতে সেখানে ঈষাণরায়ের বোন শিক্ষকতা করতেন। তার বিয়ে হয়ে যাবার পর আর নতুন কোন শিক্ষক পাওয়া যায়নি। ফলে যথা পূর্বং তথা পরং! এছাড়াও রহমান খাঁ’য়ের মনোজগতে লেখা-পড়ার স্থান খুব নগন্য! মাথায় সবসময়ই কাজ করে রোজগারের বিষয়। এই রোজগারের সূত্রেই এক সময় ইংরেজদের পাহাড়কাটা শ্রমিক হয়ে আসামে গিয়েছিলেন। বহু পরিশ্রমের বিনিময়ে রেললাইন নির্মাণের পাহাড়কাটা শ্রমিক হয়ে কিছুটা কামাই করতে পেরেছিলেন। ওখানেই ওই আসামের পাহাড়ী এলাকায় কাজ করার সময় এক পাহাড়ী মুসলমান মহিলাকে গোপনে প্রেম করে বিয়ে করেন।
সুদীর্ঘ দিনের ঘরে জমানো টাকা শেষ হতে শুরু করেছে। বাড়ীতে দারীদ্রের ছাপ স্পষ্ট হয় উঠছে। আগে সারাবাড়ীর চৌদিকে বাঁশের তৈরী গর্সি দিয়ে বেড়া দেয়া হতো। এখন আর তার সে অবস্থা নেই। বাড়ী অনেকটা খোলামেলা হয়ে পড়েছে। আশপাশ বাড়ীঘরের বিভিন্ন পরিবারের গরু-ছাগল বাড়ীতে নির্বিগ্নে ঢুকে পড়ে। গেলো সপ্তাহেই পশ্চিমপাড়ার নয়াবাড়ীর খাঁ’য়েদের ছাগল বাড়ীতে ঢুকে বৌয়ের লাগানো লাউগাছ আর রাঙ্গাচারার বেহাল দশা করে দিয়েছে। খাঁ’য়েদের সাথে কথা বলে কোন কাজ হবে না। অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ায় লগ্রবাড়ীর নিকটাত্মীয় এই খা’য়েরাও আগের চোখে তাদের দেখে না। প্রায়ই তাদের গরু-ছাগল বাড়ীতে ঢুকে ফসলের ক্ষতি করে। মানুষ গরীব হয়ে গেলে আত্মীয়-স্বজনেরাও একটু নাকসিটকে তাকায়। রহমান খাঁ ভাবেন তার বিগত যৌবনের কথা। এই সেদিনও যখন তার বাবা পঁচা খান জীবিত। গাঁয়ে তারাই প্রতাপশালী পরিবার। তখনও গাঁয়ে অবস্থাসম্পন্ন হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি পরিবার। রহমান খাঁ’য়েরা ছিলেন তাদেরই একটি। কিন্তু আজ, সময়ের ব্যবধানে একি হতে চলেছে! কোন সুরাহাই খুঁজে পান। রহমান খাঁ ভাবেন এখন কি করবেন। এদিকে ঘরে ছেলে-মেয়েগুলো বড় হচ্ছে।
দুঃখ যখন আসে তখন সব দিক থেকেই আসে। এমন দূর্দিনে অকূল সাগরে ভাসিয়ে তার একমাত্র ভরসা বৃদ্ধা মা’ও জীবনের ওপারে পাড়ি জমালেন। রহমান খাঁ এখন একা। একেবারেই একা। এখন আব্দুর রহমান ভাবেন, মা’কে শেষ বয়সে চিরবিদায়ের সময় ভাল চিকিৎসাও করাতে পারেননি। চিকিৎসা হলে হয়তো মা আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতেন। মায়ের জন্য রহমান খাঁ একা একা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদেন। তার স্ত্রী মায়ের অনেক সেবা-সশ্রুষা করেছেন। দীর্ঘকাল মায়ের সেবা আর অভাবি পরিবারের ঘানি টানতে গিয়ে একসময় রহমান খাঁ’র স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ স্ত্রীর ডাক্তারী খরচের ব্যয়ভার বহন করা তার জন্য বোঝা হয়ে উঠে। (আরো আছে)

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT