1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
এই জন-জনপদে - মুক্তকথা
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:৪৫ পূর্বাহ্ন

এই জন-জনপদে

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮
  • ৬৯৪ পড়া হয়েছে

মোগলদের ‘অহুখানা’। ফার্সীতে হরিণকে ‘অহু’ বলে।  বাগানবাড়ীর নমুনায় নির্মাণ, সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহল হরিণ শিকার অনুশীলন করতেন এখানে। এখানেই তার মরদেহ ৬মাস রাখা হয়েছিল সুগন্ধী আতর-গোলাপ দিয়ে।

বোরহানপুরে তপতি নদীর তীরে তাজমহল নির্মাণের কথা ছিল সম্রাট শাহ্জাহানের

বেগম মমতাজ মহলের গোসলখানা। এই হাম্মামের দেয়ালে অঙ্কিত দালানের নমুনায়ই তাজমহল নির্মাণ করা হয় বলে অনেক গবেষকের ধারণা।

হারুনূর রশীদ।।

তাজমহলের সৌন্দর্য, দ্যুতি, জাঁকজমক, মহিমা এমনকি ঐতিহ্য সারা দুনিয়ায় অদ্বিতীয়। পৃথিবীর এমন কোন স্মৃতিমিনার বা সুরম্যপ্রাসাদ নেই যা তাজমহলের চেয়ে বেশী সুন্দর দ্যুতিময় বা ঐতিহ্যময়। সাদা মর্মর পাথরের নির্মাণ সম্রাট শাহজাহান ও তার মহারাণী মমতাজ মহলের এ সমাধি মিনারটি দেখামাত্রই যে কেউ চিনে নিতে কষ্ট হয় না। কিন্তু কর্মচঞ্চল আগ্রা সড়ক থেকে ৫শত মাইল দক্ষিন-পশ্চিমের নীরব নিশ্চুপ গ্রামীণ শহর বুরহানপুর অনেকেরই স্মরণ থেকে হারিয়ে গেছে। এখানে এই বুরহানপুরে রয়েছে মহারাণী মমতাজ মহলের মরণের পরের আরেক স্মৃতি আরেক অধ্যায়।
বুরহানপুর বর্তমান মধ্যপ্রদেশের একটি নিঝুম ছোট্ট শহর। সুফি সাধক বোরহান উদ্দীন গরীবের নামানুসারে এ গ্রামের নাম বোরহানপুর হয়েছিল। এখানে ভ্রমণকারী, পর্যটকদের নেই তেমন আনাগোনা। অবহেলা অযত্নের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে এখানের অতীত রাজকীয় নির্মাণগুলো। বুরহান পুরের এই ‘অহুখানা’য়ই মৃত্যুবরণ করেছিলেন মহারাণী বেগম মমতাজমহল। তাকে এই ‘অহুখানা’য়ই প্রথম দাফন করা হয়েছিল। ‘অহুখানা’ যা কারুকাজময় রাজকীয় বাগানবাড়ী বলেই বলা যায়।
বছরে কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ লাখ পর্যটক তাজমহল দেখতে আসে। কিন্তু তারা কেউ জানেনা, সুরম্য প্রাসাদের চেয়েও দামী শ্বেতপাথরের তৈয়ারী যার সমাধিসৌধ দেখতে তারা আসে, জগদ্বিখ্যাত সেই মহিয়ষী মহারাণী মমতাজ মহলের প্রথম সমাধি সৌধ ছিল বুরহানপুরের এই ‘অহুখানা’য়। 
প্রায় ৬মাইল দীর্ঘ এলাকা নিয়ে নির্মিত বাদশাহী এই বাগানবাড়ী ‘অহুখানা’য় দু’টি ইমারত নির্মাণ করা হয়েছিল। শাহেনশাহ শাহাজানের থাকার জন্য অসংখ্য নক্শায় সজ্জিত একটি ছোট আকারের প্রাসাদ এবং ‘বড়দারি’ নামের বহু খুঁটির ব্যবহারে খোলামেলা একখানা বৈঠকখানা। ওই বাগানবাড়ীতে হরিণ পালনের ব্যবস্থা ছিল। এখানে মহারাণী বেগম মমতাজ মহল শিকার অনুশীলন করতেন। সম্রাট শাহজাহানের জন্য তারই সময় এটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৬শ শতাব্দীতে। 
মহারাণী মমতাজ মহল বুরহানপুরের এই ‘অহুখানা’য়ই ১৬৩১ সালের ১৭ই জুন তার ১৪তম সন্তান প্রসবের সময় মৃত্যুমুখে পতিত হন। ফলে, এখানে এই ‘বড়দারি’তেই তাকে প্রথমতঃ সমাহিত করা হয়। মৃত্যুর পর ৬মাস পর্যন্ত তিনি এখানেই সমাহিত ছিলেন।
এখন এই ‘অহুখানা’ অবহেলিত। দিনে দিনে ধ্বংস হচ্ছে মহামূল্যবান অতীত স্মৃতিবহনকারী বাদশাহী নিদর্শন ও তার কারুকার্যময়

সুফি সাধক বোরহান উদ্দীন গরীবের মাজার, বুরহানপুর, ভারত।

নির্মাণকর্ম। দেয়ালের গায়ে অসংখ্য লেখা-লেখি, পাকা দেয়ালে ভয়ঙ্কর ফাটল, এ সবকিছু অতীত ঐতিহাসিক স্মৃতি রক্ষার বিষয়টিকে অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ করে। 
সম্রাট শাহজাহান উত্তরের শহর দিল্লীতে বসেই রাজ্য শাসন করতেন। ১৬২০ সালের শেষের দিকে দক্ষিনের দাক্ষিনাত্য বিদ্রোহ তার শাসনকে সন্ত্রস্ত করে তুলে। সেসব বিদ্রোহ দমনের লক্ষ্যে বুরহানপুরে তিনি এই দূর্গটি গড়ে তোলেন। এখান থেকে তিনি দু’বছর বহু অভিযান পরিচালনা করেন। ‘অহুখানা’র এই হরিণপল্লীর এক প্রান্তে শান্ত সুশীতল তপতি নদী তীরে “শাহী কিল্লা” নামে তিনি তার আবাস নির্মাণ করেছিলেন। সে সময় বুরহানপুর ছিটকাপড় ও আফিং-এর জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। 
এখনও এই বুরহানপুর দক্ষিনে যাবার প্রবেশ পথ।

জানা যায়, সন্তান জন্মের সময় শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্ত বের হয়ে যাবার কারণে মহারাণী মমতাজমহল খুবই দূর্বল হয়ে পড়েছিলেন এবং মৃত্যু অবধারিত বুঝে, তার সারা জীবনের ভালবাসা, উন্মাদপ্রায় সম্রাটকে ডেকে কানের কাছে নিয়ে দ্বিতীয় বিবাহ না করার আবেদন করেছিলেন এবং তার কবরের উপর স্বর্গতূল্য একটি সৌধ নির্মাণের আব্দার করেছিলেন। যা তিনি স্বপ্নযোগে দেখেছিলেন। একজন মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয়ার পর পরই রাজকীয় লিপিকার রাণীর মৃত্যু সময় ও তারিখ সাথে সাথেই লিপিবদ্ধ করেছিলেন। লিপিকার লিখেছিলেন, তার শেষ নিঃশ্বাসের পরমূহুর্তে বেগম মমতাজমহলের চেহারায় স্বর্গীয় দ্যুতি জেগে উঠেছিল। মমতাজমহলের মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর্যন্ত সাম্রাজ্যের বিচার কাজে সম্রাট উপস্থিত হননি। জীবন তার কাছে অর্থহীন হয়ে উঠেছিল। রাজকীয় বিচারালয় শোক পালন করে এবং রাজকর্মচারীগন শ্বেতবস্ত্র পরিধান করে।
মমতাজমহলের প্রতি সম্রাটের ভালবাসা এতই গভীর ছিল যে তার বিয়োগ ব্যথায় সম্রাট দুঃখের অতল গহীনে পড়ে যান। রাতারাতি তার চুলে পাকন ধরে। দু’বছর তিনি দুনিয়ার কোন উৎসব আনন্দে শরিক হননি। এমনকি ঈদের দিনে সম্রাট তার প্রিয় সঙ্গিনীর কথা স্মরণে এনে বিলাপ করে কাঁদতেন। মমতাজমহলের মৃত্যুর পর ছয়মাস তার দেহ সুগন্ধী ঔষধি দিয়ে সংরক্ষন করা হয় এবং ‘অহুখানা’য় রাখা হয়। শাহজাহান তার প্রাসাদে বসে এক দৃষ্টিতে মমতাজমহলের কবরমিণারের দিকে চেয়ে থাকতেন। প্রতি শুক্রবারে ‘বড়দারি’তে গিয়ে তার আত্মার শান্তি কামনায় তিনি ফাতেহা পাঠ করতেন।

অহুখানা স্মৃতিগৃহ। এখানেই সম্রাজ্ঞী মমতাজমহলকে মরণের পর ৬মাস রাখা হয়েছিল। দালানের ছাদ ভেঙ্গেগেছে হয়তো বা বহু আগেই। টিকে আছে শুধু দেয়ালশরীর ইতিহাসের রাজসাক্ষী হয়ে। বলা হয়, এখানেই তাজমহল নির্মাণের ইচ্ছা ছিল সম্রাট শাহজাহানের।

বোরহানপুর শাহী কিল্লাহ’র মূল প্রবেশ পথ ও তার বর্তমান দশা।

শাহী কিল্লাহ, বোরহানপুর। ১৮৫৮সালে অংকিত।

মোগলদের শেষ সময় পর্যন্ত এই অহুখানা ছিল মোগল রাজন্যবর্গের বিশ্রামের নির্জন আবাস। ছোট ছোট নহরের জলধারায় সিক্ত মোহনীয় গোলাপবাগান সুগন্ধ আর সৌন্দর্য্য বিলিয়ে দিত অহুখানার চারিধারে। ‘বড়দারি’ বাড়ীমহল নির্মাণ করা হয়েছিল গোলাপ খোদাই করা বেলেপাথর দিয়ে। বেলেপাথরের এসব দেয়াল ছিল বাহারী চিত্রাঙ্কনে পরিপূর্ণ। সে ধনাঢ্যতা এখন আর নেই। অনেক আগেই বিদেয় হয়েছে। এখনতো এগুলো ধ্বংসাবশেষ। মেঘের দিনে জলাবদ্ধতায় কাদামাখা পথে ধ্বংসাবশেষে পৌছতে হয়। পাহাড়ী লতাগুল্ম আর লম্বা লম্বা ঘাসের পাতাই এখন ‘বড়দারী’র পাহারাদার।
জানা যায়, সম্রাট চেয়েছিলেন রাণীর স্মৃতি রক্ষায় উৎসব করতে কিন্তু তার মৃত্যুর ৬মাস পর ১৬৩১ সনের ১৪ই ডিসেম্বর বুরহানপুরবাসী এক বিষাদ বিষণ্ণ মিছিল বের করে। তাদের দাবী মহারাণীর দেহাবশেষ আগ্রায় নিতে হবে। ১৬৫৩ সালে, তাজমহল বানানোর কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ২২ বছর, তার মরদেহ যমুনা নদীর তীরে একটি বাগানে রাখা হয়।
বুরহানপুরের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে মোগল ঐতিহ্যের ধ্বংসাবশেষ। বলাযায় বুরহানপুর মোগলদের এমনকি বর্তমান ভারতের‌ও অতীত ঐতিহ্যের এক ভাণ্ডার। ঐতিহ্যপ্রিয় বুরহানপুরবাসী এখনও বলেন সৌন্দর্য্যমণ্ডিত ওই শ্বেতপাথরের তাজমহল কোন এক সময় বুরহানপুরের এই অবহেলিত ‘অহুখানা’য়ই হওয়ার কথা ছিল। সূত্র: পুজা চাঙ্গইওয়ালা, ডিয়ানা, নন্দকিশোর দেভদা, মাইকেল প্রেস্টন, কুরুশ দালাল ‌ও এ্যাটলাস অবস্কোরা অবলম্বনে। সুফি সাধক বোরহান উদ্দীন গরীবের নামে বোরহানপুর।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT