1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
বিপ্লবী আন্দোলন ও সংগ্রামে মৌলভীবাজার - মুক্তকথা
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:৩২ পূর্বাহ্ন

বিপ্লবী আন্দোলন ও সংগ্রামে মৌলভীবাজার

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০১৯
  • ৫৬৫ পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজারের অতীত খুঁজে বেরিয়েছি জীবনের বেশীরভাগ সময়। এই খুঁজাখুঁজি করতে গিয়ে অতীত কাহিনী লিখার আঁকর হিসেবে যা পেয়েছি তাই এখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে তুলে ধরার ইচ্ছায় আজকের এই প্রতিবেদন।
চলতি বছরের প্রথম দিকে, গেল ৩রা জানুয়ারী, বৃহস্পতিবার ২০১৯ইং তারিখের মুক্তকথায় “বিপ্লবী আন্দোলন ও সংগ্রামে মৌলভীবাজার” শিরোণামে লিখেছিলাম খ্যাতিমান ভূস্বামী, জমিদার আলী আমজাদ খাঁ ও মণিপুরী প্রজা বিদ্রোহ বিষয়ে। এ প্রসঙ্গে এই ‘দক্ষিণ সিলেট’কে নিয়ে আমার খুঁজাখুঁজির বিষয়েও কিছু উল্লেখ করেছিলাম। গত পর্বে যা লিখেছিলাম তারপর-

হারুনূর রশীদ।।

জমিদার মৌলভী আলী আমজাদ খাঁ বিষয়ে শেষ কথা বলার আগে মৌলভীবাজার নিয়ে কিছু আলোকপাত করা আবশ্যক মনে করি। মৌলভীবাজারের ইংরেজ আমলের নাম ছিল ‘দক্ষিণ সিলেট’। বৃটিশ রাজকীয় সরকার ১৮৮২খৃষ্টাব্দে এই এলাকাকে ‘দক্ষিণ সিলেট’ মহকুমা বলে আখ্যায়িত করেন। প্রাচীন এই জনপদটির অতীত কাহিনী খুঁজতে গিয়ে লক্ষ্য করেছি প্রাচীনকালে এই এলাকায় যারাই ছিলেন তাদের অধিকাংশই খুব ইতিহাস বিমুখ মানুষ ছিলেন। লিখিতভাবে তাদের শাসনকর্ম লিপিবদ্ধ করে রাখার তেমন প্রয়োজন তারা মনে করতেন না। পুস্তিকাতো দূরের কথা খুবই অল্পসংখ্যক মানুষের কাহিনী ছাড়া লিখিত পুস্তিকাকারে এলাকার বিষয়ে কিছুই পাওয়া যায়না। যেগুলো পাওয়া যায় সেগুলোরও কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। সব শ্রুতি। কল্পকাহিনীতে ভরা। এমনও আছে অনেক ভুল তথ্যদিয়ে পুস্তিকা রচিত হয়েছে। এসব পুস্তিকার চেয়ে কল্পকাহিনীগুলো বরং অনেকটা বিশ্বস্ত হওয়ার দাবী রাখতে পারে।


লোকমুখের কল্পকাহিনী, চারণগীতি, কেচ্ছা-পাঁচালী এগুলোর উৎসে রয়েছে ইতিহাসের আকর। সে আকর খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে এ অঞ্চলের খুব কম মানুষই। যারা এই আকর সংগ্রহের কাজ করেছেন তাদের দু’একজন, আকর থেকে অতীত ঘটনা খুঁজে বের করে নিয়ে আসার চেয়ে নিজেদের কাহিনী বর্ণনায় সময় নিয়েছেন বেশী। ফলে সত্যিকারের ইতিহাস রচনা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। অবশ্য নিজেদের কল্পকাহিনী রচনায় মানুষের অদম্য স্পৃহা নতুন কিছু নয়। মানুষের বিভিন্নমুখী কর্মকান্ডইতো মানবসভ্যতার স্তরে স্তরে কাজ করেছে উত্তরণে। তবে সমাজের সকল স্তরেই সুযোগ সন্ধানীরা যুগে যুগে ছিল এখনও আছে।

একটি বিষয় সুস্পষ্ট যে নিজেদের কাহিনী আর ইতিহাস এক নয়। দুনিয়ার সব মানুষেরই কিছু কিছু কাহিনী আছে এবং থাকতেই পারে। কিন্তু তার সবগুলোই যে ইতিহাস হবে বা ইতিহাসের পাতায় স্থান দিতেই হবে, তা নয়। সে স্থানীয় বা আঞ্চলিক হোক আর জাতীয় হোক। মানুষের সেইসব ঘটনাকেই ইতিহাস বলে মানুষ স্বীকৃতি দেয় যে ঘটনা প্রবাহ মানুষের সভ্যতার অগ্রযাত্রায় সহায়ক হয় কিংবা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সমাজকে এক স্তর থেকে পরের স্তরে নিয়ে যায়। আবার সমাজের স্থিতাবস্থায় তার সফল পরিচালনায় যারা নিয়ামক ভূমিকা রাখেন তাদের ঘটনাপ্রবাহ সত্যিকার ইতিহাসের মৌলিক উপাদান।
ইদানিংকালের গুগোল আর ইন্টারনেটে গেলে অহেতুক নাম প্রচার কিংবা মিথ্যার যে বেশাতি পরিলক্ষিত হয় তা সত্যই মানুষের মনের দৈন্যতারই পরিচয়। নাম বলা যাবে এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি এমন দু’একজন দেখেছি নিজেদের নাম ভূঁয়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে লিখে দিয়েছেন। আরো দু’একজন আছেন, নিজেদের প্রচারে তারা এতোই অন্ধ যে জেনে শুনেই নামের সাথে মিথ্যা পদবি যেমন ‘ডক্টর’ নির্দ্বিধায় বসিয়ে দিয়েছেন। এরা মূর্খের স্বর্গে বসবাস করছেন। তাদের জানা উচিৎ মিথ্যা কোন কালেই ইতিহাস হয়ে থাকতে পারে না। বিশেষ করে কালের এই অবিশ্বাস্য বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষের সময়ে মিথ্যার যেমন বেশাতি থাকবে তেমনি মিথ্যাকে চিরতরে মুছে ফেলে সত্যকে প্রতিষ্ঠায় মানুষের চেষ্টা থাকবে আরো বেশী। মিথ্যা বা ভুল কোন না কোন কালে এসে সংশোধিত হবেই হবে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে কিছু মানুষকেই কাজ করতে হবে। আপনা-আপনি তো আর কিছু হয় না।

‘দক্ষিণ সিলেট’ বা ‘মৌলভীবাজার’ নামের এই অঞ্চলের পাহাড়ের মাটি হাতে নিয়ে যে কেউ আন্দাজ থেকে বলে দিতে পারবে যে এ মাটি কোটি কোটি বছরের পুরানো মাটি। এ পাহাড় কোন মানুষের তৈরী পাহাড় নয়। এ পাহাড় প্রাকৃতিক। “বিগবেঙ্গ” তত্ত্বের আমল থেকেই এ মাটির জন্ম। উঁচু নিচু স্তরে স্তরে সাজানো, অধরা উপর থেকে গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলের মত সাঁজিয়ে এ পাহাড়ের জন্ম দিয়েছে প্রকৃতিমাতা, এ মাটির পরতে পরতে রয়েছে ইতিহাসের আকর; যার শুরু আজও অজানা। এই পাহাড় ধরে হাটতে থাকলে হিমালয়ের চূড়ায় গিয়ে উঠা যাবে।
গবেষকদের কাছে পাহাড় মানেই প্রাণীর আদি বাসস্থান। এ বিশ্ব মন্ডলে প্রানের আগে পানি ছিল। পানিতেই প্রথম প্রানের উদ্ভাস। গবেষকগন সে প্রানের নাম দিয়েছেন ‘এমিবো’। এককোশি প্রাণী। পানি পরবর্তী পর্বে প্রান, পাহাড়ে উঠে। সেওতো প্রাগৈতিহাসিক সময়েরও আগের কথা। তখনও প্রান মানুষে রূপান্তরীত হয়নি।
‘দক্ষিণ সিলেট’এর আগে এ অঞ্চলের নাম ছিল ‘মুনুকূল’। সে ছিল ‘ত্রিপুরা’ রাজ্যের চন্দ্র বংশীয় রাজাদের আমলে। যখন ত্রিপুরার রাজপাট ছিল বর্তমান কৈলাশহরে। চন্দ্র থেকে ত্রিপুর ৪৬তম রাজা ত্রিপুরার। রাজা ত্রিপুরের নামেই রাজ্যের নাম ত্রিপুরা। সেই ত্রিপুর রাজার অনেক অনেক পরে সম্ভবতঃ ১১শ বা ১২শ শতাব্দীকাল সময়ে বর্তমান মৌলভীবাজারের পাহাড়াঞ্চলে গড়ে উঠেছিল ক্ষুদ্র কোন একটি রাজ্য। যা’কে চন্দ্ররাজ্য বলা হতো। শ্রুতিতে এখনও আছে ‘রাজচন্দ্র’ শব্দটি। কেচ্ছা কাহিনী ছাড়া কোন ধরনের ঐতিহাসিক তথ্য বা কাগজাত নেই এই রাজচন্দ্র বা শ্রুতির রাজা চন্দ্র সিং-কে নিয়ে। এই চন্দ্ররাজ্যের রাজা ছিলেন চন্দ্র সিং নামের ব্যক্তি। তারই নামানুসারে মানুষ রাজ্যকে চন্দ্ররাজ্য বলতো বলেই শ্রুতিতে আছে। অনুমান করা যেতে পারে যে চন্দ্ররাজ্যের রাজা চন্দ্র সিং ত্রিপুরা রাজার অধিনস্ত কোন নৃপতি বা ভূস্বামী ছিলেন।
শ্রুতিতে আছে একসময় বর্শীজুড়ার পাহাড় থেকে পশ্চিমে দিনারপুরের পাহাড় পর্যন্ত নৌকায় আসা-যাওয়া হতো। মাঝখানে সাগর সদৃশ অথৈ জলরাশি ছিল। কোন বসতি ছিল না। এখনকার সময়ের জন্য একথাগুলো মনে হবে অবিশ্বাস্য। কিন্তু এমনই ছিল। পরে ধীরে ধীরে চর জেগে বর্তমানের জনপদগুলি জেগে উঠেছে। মানুষ  বসত গড়ে তুলেছে। এখনও জেলার তিন তিনটি বৃহৎ হাওর প্রাচীন যুগের সেই জলমগ্নতার ইতিহাসেরই সাক্ষ্য দেয়।
আগে উল্লেখ করা হয়েছে যে বাংলার স্বাধীন সুলতান দাউদ শাহ কররানীর আমীরুল উমারা ইসমাইল খাঁ লোদী ছিলেন “খান জাহান খাঁ” উপাধিপ্রাপ্ত আরো একজন। তিনিই ছিলেন আলী আমজাদ খাঁ’য়ের পূর্বসূরী। “খান জাহান খাঁ” এ উপাধি শুরু করেছিলেন মোগল সম্রাটগন এবং মোগল দরবারে একজনকেই দেয়া হয়েছিল। সেই তিনি ছিলেন সম্রাট আকবর প্রেরীত কিজিলবাস গোত্রীয় হোসেন কুলি খাঁ। তাকে শাহেনশাহ সম্রাট আকবর বাংলা বিজয়ের জন্য এই উপাধি দিয়ে পাঠিয়েছিলেন এবং এই খান জাহান খাঁ হোসেইন কুলি খাঁ বাংলার শেষ সুলতান আফগান জাতির দাউদ শাহ কররানিকে যুদ্ধে পরাজিত ও হত্যা করে বাংলার মসনদ দখল করেছিলেন। এ সময় মোগাল ও আফগানদের মাঝে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য শাসন ও দিল্লীর সিংহাসন নিয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতা চলে আসছিল। এই প্রতিদ্বন্দ্বীতার ফলস্বরূপ মোগলদের অনুকরণে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বিবেচনায় বাংলায় আফগান লোদী শাসকগন “খান জাহান খাঁ” উপাধি দেয়া সাব্যস্ত করে একজনকে দিয়েছিলেন আর তিনিই ছিলেন নবাব আলী আমজাদ খাঁ’এর পূর্বপুরুষ আমীরুল উমারা ইসমাইল খাঁ লোদী। বাংলার সুলতান দাউদ শাহ-এর পিতা সুলেমান শাহ্ এই ইসমাইল খাঁ লোদীকে উড়িষ্যার শাসক নিযুক্ত করেছিলেন। পরে দাউদ শাহ ১৫৭৩ খৃষ্টাব্দে বঙ্গের ক্ষমতায় এসে ইসমাইল খাঁ লোদির শাসক নিয়োগকে নিশ্চিত করেছিলেন।(ড. ব্লকমেন-এর বাংলার ইতিহাস ও ‘আইন ই আকবরী’র অনুবাদ পৃষ্ঠা যথাক্রমে ৩০৫/২২৪/২৯৬ ও ৩৬৬/৫২০)।
আলী আমজাদ খাঁ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ খানজাহানখাঁ ইসমাইল লোদী’র বাবা সকি সালামত ১৪৯৯ইং সনে পারস্য থেকে এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। খানজাহান খাঁ ইসমাইল লোদীর পুত্র শামসুল দীন খাঁ ১৬২৪খৃঃ থেকে ১৬৮২খৃঃ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন।(-চলবে)

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT