1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
একজন সুমনের জীবনযুদ্ধ - মুক্তকথা
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৪৮ অপরাহ্ন

একজন সুমনের জীবনযুদ্ধ

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৯
  • ৪৬৯ পড়া হয়েছে

এটিই হলো মৌলভীবাজার শহরের পূর্বপ্রান্তের বর্শীজুড়া পাহাড় সংলগ্ন ফাটাবিল। প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের ছিটেফোঁটাও এখন আর নেই। একদিকে গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত দালানকোটা। পাশাপাশি অবাঞ্চিত পরিবেশ বিনষ্টকারী ময়লা-আবর্জনায় ভরে উঠছে চারপাশ। নান্দনিক সৌন্দর্য্য এখন সোনার হরিণ।

সুমনের কুঁচে শিকারের উঁকা।

মুক্তকথা নিবন্ধ।। পরনের লুঙ্গি পাছায় গুছিয়ে ফাঁটা বিলের থোকা থোকা কচুঁরিপানা, ছোট ছোট ঝোঁপ-জঙ্গলে ভরা জলমগ্ন হাওরে কি যেনো খুঁজছে ছেলেটি। গায়ে গেঞ্জিপড়া মানুষটিকে দূর থেকে দেখতে শিল্পীর আঁকা ‘খাদ্য সন্ধানে আদিম মানব’ ধরনের একটা কিছু মনে হয়। অবস্থার দৃশ্যপট তার কাছে যেতে হাতচানি দেয়। কি যেনো লম্বা ঝাঁপির মত কিছু হাতে ধরে বিল থেকে রাস্তায় উঠে আসে সে। কাছ থেকে দেখতে গিয়ে বুঝতে পারলাম এগুলো মাছ ধরার সরঞ্জাম। তার উত্তরে জানলাম জিনিসটির স্থানীয় নাম “উঁকা”। তার নাম সুমন। তিনি একজন কুঁচে মাছ শিকারী।
সুমনের বয়স এখন ২০ বছর। ভরা যৌবন। এখন তার যুদ্ধে যাবার সময়। সুমন অবশ্য যুদ্ধেই আছে। তার যুদ্ধও মুক্তি যুদ্ধ। তার জানামতে দাদা-পৌরদাদার আমল থেকেই তারা যুদ্ধ করে যাচ্ছে। বংশ পরম্পরায় এ যুদ্ধে সুমনরা হেরেই যাচ্ছে। বিজয়ের কুসুম সুবাস, প্রাপ্তির আনন্দ, নিজস্বতার স্বাদ এসকল শব্দগুচ্ছের মর্মকথা তাদের অজানাই রয়ে গেছে। হয়তো একদিন সুখ-আহ্লাদ তাদের ঘরে আসবে, মনের অলিন্দে সুবাস লাগবে। সে আশায়ই সুমনরা যুদ্ধ করে যায় যুগের পর যুগ, শতাব্দির পর শতাব্দি। মুক্তির স্বাদ তাদের দোরগোড়ায় আজও পৌঁছায়নি। তবুও তারা যুদ্ধ করেই চলে।
কুঁচে মাছ শিকারের যুদ্ধে সুমনকে দিন-রাত উঁকা, লাঠি, ডরি হাতে নিয়ে হাওরে বিলে ঘুরে বেড়াতে হয়। কখনও কখনও হাওরেই মুক্ত আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয় তাকে। সুমনের বাড়ী মৌলভীবাজার শহরের দক্ষিনে ভৈরব বাজারের পশ্চিম দিকে অবস্থিত মনার গাঁও নামের গ্রামে। ১২ বছর বয়সে সুমন এ পেশায় নেমেছিলো। ৮ বছর ধরে এ পেশায় আছে। শহর সংলগ্ন জগন্নাথপুর গ্রামের পশ্চিম প্রান্ত ঘেঁষে প্রকৃতির নৈসর্গ ‘কাঞ্জার হাওর’ আর শহরের পূর্বপ্রান্তের ‘ফাটাবিল’ হলো সুমনের যুদ্ধ ময়দান। ৮০টি উঁকা তার জীবনযুদ্ধের হাতিয়ার।  এ দুই ছোট-বড় হাওর-বিলের হাটুজল কোমরজলে নেমে তাকে উঁকা ও ডরি পেতে রাখতে হয়। খুবই পরিশ্রমের কাজ। ভোর ৭টায় ঘর থেকে বের হয়ে উঁকা-ডরি তোলার কাজে লেগে যায়। বেলা ১টার মধ্যে সব তুলে কুঁচে মাছ নিয়ে বাজারে যেতে হয়। এভাবেই কাটছে তার জীবনের মুক্তির যুদ্ধ।
সুমনের সাথে আলাপ করে জানা গেল বাড়ীতে তার ৩ভাই বাবা ও ২মা সহ মোট ৬জনের সংসার। মা অসুস্থ। তাই বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। সুমন আরো জানায়, গত ফাল্গুনে একমাত্র বোনকে বিয়ে দিতে গিয়ে ব্রাক ব্যাংক থেকে মাসিক কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে ৮০হাজার টাকা তারা ভাইয়েরা ঋণ করেছেন। প্রতিমাসে ১০হাজার টাকা হিসেবে ঋণ পরিশোধ করে যাচ্ছেন সবভাই মিলে। দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে এক করুণ চাহনীর আর্তিভরা চোখে সুমন জানালেন ব্যাংকের সুদি ঋণ শেষ হয়ে গেলে কুঁচে মাছ শিকার ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন ব্যবসার কথা ভাববে। কুঁচে মাছের দাম বাজারে একেবারে কমে গেছে। এই কয়েকমাস আগেও কুঁচে মাছের কেজি ছিল ৩০০টাকা। এখন মাত্র ১৫০টাকা। আর মাছ‌ও আগের মত পা‌ওয়া যাচ্ছে না।
উঁকা খরিদ করতে হয় বড়লেখার বাজার থেকে। প্রতি একশত উঁকা ২,৫০০টাকা। গাড়ী ভাড়া ১,৫০০টাকা। প্রতি দেড়মাস অন্তর উঁকা কিনতে হয়। বছরের মাত্র ৬মাস কুঁচে মাছ মারা যায়। বাকী ৬মাস অন্য কোন কাজের সুযোগ এখন আর নেই। তাই লগ্নিকরে এতোটাকা বিনিয়োগ করে মাছ ধরে আগের মত আর লাভ হয় না। এ ছাড়াও হাওরের চতুর্দিকে বাড়ী-ঘর উঠে গিয়ে উঁকা-ডরি রাখার জায়গা নষ্ট হয়ে গেছে। সাপ-বিচ্ছুর ভয়তো আগ থেকেই ছিল। নতুনকরে মানুষজন বিলে আজে-বাজে জিনিষ ফেলে দিয়ে একদিকে যেমন হাওর-বিলের সৌন্দর্য্য নষ্ট করছে, অন্যদিকে মাছের বংশবৃদ্ধিতেও ভয়ানক এক বিরূপতা সৃষ্টি করেছে। প্রায় সকল হাওর-বিলের উপকূল এখন আগের মত পরিবেশ বান্ধব নেই। মৎস্য খাদ্যের বদলে আজে-বাজে প্লাস্টিক সামগ্রী মৎস্যজন্মের বাধা হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি ভাঙ্গা কাঁচের টুকরায় বিলের উপর দিয়ে পায়ে হাটাকে ভয়ঙ্কর নমুনায় বিপদগ্রস্থ করে তুলেছে। সুমন তার পায়ের তলা দেখিয়ে বললেন গেল মাস খানেক আগে কাঁচের টুকরায় পা কেটে যায়। পুরো এক সপ্তাহ কাজ করতে পারেননি। এসব কিছুর ফলে এ পেশায় থাকা আর সম্ভব হবেনা। হয়তো আগামী মৌসুমে সুমনকে আর দেখা যাবেনা উঁকা-ডরি হাতে হাটুজলে হাটতে।

শুকিয়ে উঠেছে সুমনদের জীবনযুদ্ধের ফাটাবিল। দেখলে কেউ বিশ্বাসই করতে চাইবে না যে এ ভূমি একসময় বারোমাসই জলেডুবে থাকতো। অপরিকল্পিত বাড়ীঘরে ছেয়েগেছে। আরো উঠছে। এখনই সময় অপরিকল্পিত দালান-কোটা তোলায় নিষেধাজ্ঞা আনায়।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT