1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
মহান স্বাধীনতা শহীদ শের আলী ও ক্ষুদিরাম - মুক্তকথা
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:৩৩ অপরাহ্ন

মহান স্বাধীনতা শহীদ শের আলী ও ক্ষুদিরাম

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৯
  • ১৩৫৫ পড়া হয়েছে

মুক্তকথা নিবন্ধ।। দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রানবলিদানকারী ইতিহাসখ্যাত ক্ষুদিরাম বসু ‌ও ইংরেজদের জেলখানায় থেকে ফাঁসীতে প্রানদানকারী শের আলি আফ্রিদিকে নিয়ে আজকের এ লেখা। কলকাতার ফেইচবুকার দীপক রায় প্রশ্ন তুলে লিখেছেন- ক্ষুদিরাম বসু ও শের আলি আফ্রিদি এই দুই শহীদের নাম একত্রে উচ্চারিত কেন হয়না? তিনি তার ছোট্ট একটি উত্তরও দিয়েছেন অতিপরিচিত ছোট্ট সেই শব্দ ‘জানিনা’ বলে। দীপক লিখেছেন, ‘একত্রে না হলেও উচ্চারিত হওয়াটা অন্তত উচিৎ ছিল। কিন্তু ইতিহাস বড় নির্মম।’
দীপকের মন্তব্যের বিপরীতে কিছু বলতে চাই। শের আলী আফ্রিদির বিষয়ে ইতিহাসের নির্মমতা কথাটি সঠিক নয়। ইতিহাসের এখানে কোন দোষ নেই। ইতিহাসতো রচনা করি আমরা মানুষজন। যেকোন কারনেই হোক আমরা তা করিনি। আর একেবারে যে করিনি তা-ও ঠিক নয়। এই যেমন আপনার ফেইচবুক লেখা। এটিইতো স্মরণ করা। এগুলোইতো ইতিহাসের আকড়। ইতিহাসতো এভাবেই গড়ে উঠে। বলে নেয়া উচিৎ আমাদের এ লেখার উৎসাহদাতা সাংবাদিক জিতু তালুকদার। পরে অবশ্য অনেক ঘাটাঘাটি করতে হয়েছে।
কে ছিলেন সেই শের আলী আফ্রিদি? ভারতের বড়লাট হত্যার দুঃহসাহসিক সেই ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন আন্দামানে দ্বীপান্তরিত ওয়াহাবি কয়েদি শের আলী আফ্রিদি। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৮৭২ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি। মায়োর ষষ্ঠ আর্ল যার মূল নাম রিচার্ড সাউথওয়েল বুর্ক(Richard Southwell Bourke) তিনি তখন ভারতের বড় লাট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ভারতে তিনি লর্ড মেয়ো(Lord Mayo) হিসেবেই সুপরিচিতি লাভ করেন। ব্রিটিশ কনজার্ভেটিভ পার্টির এই রাজনীতিবিদ এবং আর্ল অব মেয়ো আয়ারল্যান্ডের চিফ সেক্রেটারি হিসেবে তিন মেয়াদে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৮৬৯ সালে চতুর্থ ভাইসরয় হিসেবে ভারতের সর্বোচ্চ ইংরেজ প্রশাসক হয়ে কাজে যোগাদন করেছিলেন। এখানে আন্দামান কয়েদি উপনিবেশের জন্য কিছু নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনে আন্দামান পরিদর্শনে বড়লার্ট রিচার্ড বুর্ক বা লর্ড মেয়ো ১৮৭২ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টায় আন্দামানে পৌছান এবং সঙ্গী-সাথীসহ সকাল ৮টায় রস আইল্যান্ডে অবতরণ করেন। চিফ কমিশনার জেনারেল স্টুয়ার্টের নেতৃত্বে বড়লাটের সম্মানে ২১ বার তোপধ্বনি দেয়া হয়। স্বাধীন ও কয়েদি হাজার হাজার নরনারী তখন রস আইল্যান্ডের ঘাটে উপস্থিত ছিল। এই রস আইল্যান্ড, ভাইপার আইল্যান্ড, চ্যাথাম আইল্যান্ড এবং মুল পোর্ট ব্লেয়ারের আবেরদিন বাজার সংলগ্ন কিছু এলাকাই ছিল আন্দামানের সমগ্র জেলখানা। জেলখানার কোন প্রাচীর ছিল না। সমুদ্রই ছিল তাদের প্রাচীন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ রস আইল্যান্ড, ভাইপার আইল্যান্ড ও চাথাম আইল্যান্ড অনেকটাই প্রাচীরবিহীন জেলখানা।
বিকালের দিকে তিনি মাউন্ট হেরিয়েট যান। সেখানে তিনি একটি হাসপাতাল তৈরী করবেন বলে তার পরিকল্পনা ছিল। এছাড়াও সন্ধায় মাউন্ট হেরিয়েটের পাদদেশে বসে সমুদ্রে সূর্যাস্ত দেখা তুলনাহীন! এ চিন্তা থেকে লর্ড মায়ো মাউন্ট হেরিয়েটে গিয়েছিলেন। হাসপাতালের স্থান পরিদর্শন শেষে সাওয়ারীযোগে ইয়াবু’র নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত দেখতে রওয়ানা দেন। ততক্ষণে অন্ধকার হয়ে গেছে। অন্ধকারে মশাল জ্বলে উঠলো। তিনি মশালের আলোতে নিচে অবতরণ করলেন। সেখানে লেডি মেয়ো উৎকন্ঠার সাথে অপেক্ষা করছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে জেটির পাশে লুকায়িত এক ব্যক্তি একখানা ছুরি হাতে বাঘের মতো লাফিয়ে পড়লো লর্ড মেয়োর শরীরের ওপর এবং তাঁর পিঠে ছুরি দিয়ে আঘাত হানলো। লর্ড মেয়ো কম্পিত শরীরে সমুদ্রে পড়ে গেলেন।
সমুদ্র থেকে তাকে তুলে আর বাঁচানো যায়নি। গভীর ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণে তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন। উপস্থিত সে সময়ের বিদেশ সচিব ক্যাপ্টেন এ্যাটিকসন শের আলীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন—‘তুমি এটা কেন করেছো?’ শের আলীর উত্তর ছিল— “খোদা নে হুকুম দিয়া।” তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো এই কাজে তার সাথে আর কে ছিল। ওই একইভাবে তিনি জবাব দিয়েছিলেন— “মেরা শারিক কুই আদমি নেহি, মেরা শরিক খোদা হায়।”
পরের দিনই সেশন জজ হিসেবে আদালতে শের আলী বলেছিলেন- ১৮৬৭ সাল থেকে আমার সংকল্প ছিল আমি কোনো একজন উচ্চপদস্থ ইংরেজ কর্মচারীকে হত্যা করবো। গত ৮ই ফেব্রুয়ারি লর্ড বাহাদুরের আগমন আমার দীর্ঘদিনের আশার বাস্তবায়নের সূর্য্য আকাশে উঠে। আমি জেটির আড়ালে এসে লুকিয়ে রইলাম এবং সেখানেই আমার ইচ্ছা পূর্ণ করি। আত্মস্বীকৃত এই অপরাধে শের আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। কোলকাতা হাইকোর্ট এই রায় বহাল রেখেছিল। ১৮৭৩ সালের ১১ই মার্চ ভাইপার আইল্যান্ডে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিলো।
কে এই শের আলী? একসময় ইংরেজ সরকারের অধীনেই অশ্বারোহী পুলিশে কাজ করেছেন। বাড়ি পেশোয়ারে খাইবার অঞ্চলে। তিরাহ উপত্যকা তার জন্মস্থান ছিল। কালাপানিতে বাধ্যগত কয়েদির সুনাম নিয়ে তিনি অল্পদিনে পোর্টব্লেয়ারে নাপিতের পেশায় অবাধ চলাফেরার লিভ টিকেট অর্জন করেছিলেন। তখন পোর্টব্লেয়ারে কয়েদিরূপে ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ও ওয়াহাবি বিদ্রোহীদের প্রচুর বসবাস ছিল। ওখান থেকেই তিনি ইংরেজ হত্যাকে পুণ্য জ্ঞানে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন। ১৮৭২ সালে সেই পরিকল্পনা তার সফল হয়। কিন্তু তার এই সাফল্য ভারতীয় সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য কোন গুরুত্ব পায়নি। ইংরেজ দাসত্বকে নাকে খত দিয়ে গ্রহণকারী সাভারকারের নামে আন্দামানে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী শহীদদের মাঝে ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। আন্দামান বিমানবন্দরের নামকরন হয়েছে তার নামে। অথচ ভারতের সশস্ত্র সংগ্রামের ইতিহাসে ইংরেজ ভাইসরয়কে হত্যা করতে পারার একমাত্র এবং অনন্য ঘটনার নায়ক শের আলীর নামে আমাদের জানামতে কোথাও কিছু নির্মাণ হয়নি। জন্ম-মৃত্যু দিবসেও তাকে কোনভাবে স্মরণ করা হয়না। কিন্তু কেন এমন হলো? শুধুই কি তার নাম শের আলী বলে? এই প্রশ্নে কোন সাম্প্রদায়িকতা আছে বলে আমি মনে করিনা বরং এই প্রশ্ন না তোলার মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা আছে ভয়াবহ এক রূপে।
ক্ষুদিরাম বসুর জীবন বলিদান স্বীকৃতি পেলেও শের আলী খান আফ্রিদি সেটা পাননি। ক্ষদিরামের স্বীকৃতি কোন কারণেই আমাদের হিংসার বিষয় নয়, হবেও না কোনদিন। কিন্তু ইংরেজদের ভাগকর শাসনকর নীতির পথ ধরে স্বাধীন ভারত যদি এখনও মনে করে ফেলে আসা জীর্ণ অতীতের উপনিবেশ প্রভুদের মনোরঞ্জনের দায়মুক্ত ভারত এখনও হতে পারেনি কিংবা ওয়াহাবীদের একজন বলে শের আলীকে স্মরণ করা যাবে না তা’হলে জোর গলায় বলতে চাই এর চেয়ে দ্বিমুখী নীতি আর কিছুই হতে পারে না। অবশ্য শের আলীর মূল্যায়ন না হওয়ার পেছনে আমাদের ইতিহাস লেখকেরাও কম দায়ী নয় এবং আমরা বৃহৎ ভারতীয়রাও সমভাবে দায়ী। ধর্ম পরিচয়ে তাদের মূল্যায়ন কোনভাবে ইতিহাসবিদগন করতে পারেন না।  তাদের প্রভাবিত করেছে কিনা আমি জানিনা। যদি হয়, সেটা অন্যায়। এখনই সময় ইতিহাস রচয়িতাদের সচেতন হওয়ার। সূত্র: কলকাতার দীপক রায়ের ফেইচবুক ও গোগল।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT