1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
সফল কূটনীতিক মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী - মুক্তকথা
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:২১ পূর্বাহ্ন

সফল কূটনীতিক মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯
  • ৯১৫ পড়া হয়েছে

মুক্তকথা নিবন্ধ।। সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী সংক্ষেপে এস এম আলী। দিল্লীতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে এখনও কর্মরত। আসন্ন ডিসেম্বরে তিনি অবসর নিতে যাচ্ছেন। ভারতের সাথে বাংলাদেশের গড়ে উঠা সুসম্পর্ককে আরো উঁচুতে নিয়ে যাবার আন্তরিক ইচ্ছায় বাংলাদেশ সরকার, চাকুরী থেকে প্রথম অবসরের পর তাঁকেই উপযুক্ত সাব্যস্ত করে দিল্লীতে নিয়োগ দেয়। ১৯৭১সালে বাংলাদেশের মুক্তযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানীদের হয়ে বিদেশে কর্মরত বাঙ্গালীদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজনের একজন হলেন জনাব এস এম আলী যিনি প্রকাশ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযু্দ্ধের পক্ষ নিয়ে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন।

খুবই স্বচ্ছ মনের মানুষ, সদাহাস্যোজ্জ্বল সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী প্রাচীন শ্রীহট্টের সম্ভ্রান্ত এক বনেদি পরিবারের মানুষ। তাঁর পারিবারিক ইতিহাস থেকে জানা যায় তাঁদের পূর্বপুরুষ প্রাচীন তরপের উত্তরসুর গ্রামে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর মেঝোচাচা “শাহজালাল ও সিলেটের ইতিহাস” পুস্তকের খ্যাতিমান লেখক প্রয়াত সৈয়দ মুর্তজা আলীর অপর পুস্তক “আমাদের কালের কথা” থেকে পাওয়া যায় তাঁদের সাতপুরুষের হিসেব। বৈবাহিক সম্ভন্ধে বর্তমান মৌলভীবাজারের দূর্লভপুরের সাথে তাদের বংশের সম্পর্ক গড়ে উঠে। মোয়াজ্জেম আলীর পরদাদা সৈয়দ মশাররফ আলী দূর্লভপুরের তৎকালীন জমিদার সৈয়দ তফাজ্জুল হোসেনের জ্যেষ্ঠা কন্যা হাবিবা বানুকে বিয়ে করেন। সেই থেকে বর্তমান মলইবাজারের সাথে তাদের সম্পর্ক। সেই সম্পর্কেরই পথ ধরে পরবর্তী পুরুষে তারা মৌলভীবাজারের স্থায়ী বাসিন্ধা হয়ে উঠেন।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর দাদা সৈয়দ সিকান্দর আলী ১৯২৩ সালে চাকুরী থেকে অবসর নিয়ে মৌলভীবাজারে বাড়ী খরিদ করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এ সময় তিনি দক্ষিণ শ্রীহট্ট লোকালবোর্ডের সদস্য ও মৌলভীবাজার মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়ীত্ব পালন করেন। সিলেটের ইতিহাস লেখক তদীয় চাচা প্রয়াত সৈয়দ মুর্তাজা আলীর ভাষায়-“আমার আব্বা(খান বাহাদুর) সৈয়দ সিকন্দর আলীর জন্ম হয় তাঁর নানার বাড়ীতে চৌয়াল্লিশ পরগণার দুল্লবপুর গ্রামে ১৮৬৭সালে। তাঁর ওফাত হয় তিয়াত্তর বছর বয়সে ১৯৩৯ সালের ২৬ নভেম্বর সিলেট জেলার মৌলভীবাজার শহরে। …”, (সৈয়দ মুর্তাজা আলী সাহেবের ‘আমাদের কালের কথা’ বই থেকে নেয়া)। এ থেকে বলার আর অপেক্ষা রাখেনা যে তারা মৌলভীবাজারেরই স্থায়ী মানুষ।

বৈদেশিক পরিসেবা কর্মকর্তা এবং একজন তুখোর বুদ্ধিদীপ্ত কূটনীতিক সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী সফল ও বর্নাঢ্য এক কর্মমুখর জীবনের অধিকারী। কর্মসূত্রে তিনি যেমন বহুদেশ বহু জাতি আর বহুরূপের মানুষ দেখার সৌভাগ্য পেয়েছেন ঠিক তেমনি নিজের বহুমুখি প্রতিভার বলে আচল ভরে সমৃদ্ধ করেছেন স্বীয় জ্ঞানভাণ্ডারকে। দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব হিসাবে। তার বাল্য ও যৌবনের শুরু হয়েছে মৌলভীবাজার শহরে। দাদা সিকান্দর আলী নির্মিত বাড়ীতে থেকেই তিনি বড় হয়েছেন নিজ মা-বাবা পরিবার পরিজনের সাথে। তার বাবা প্রয়াত সৈয়দ মোস্তফা আলী চাকুরীতে অবসর নিয়ে মৌলভীবাজারেই বসবাস শুরু করেন। অবসর জীবনে সৈয়দ মোস্তফা আলী সাহেব মৌলভীবাজারে ‘অনারারী ম্যাজিষ্ট্রেট’ হিসেবে বহুবছর দায়ীত্ব পালন করেন।
জনাব আলী কর্মজীবনের শুরুতে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়ে লাহোরের সিভিল সার্ভিস একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়, ‘স্কুল অফ অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে’ পড়াশোনা করেন। নিজের জাতি-গোষ্ঠীর মাতৃভাষা আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের কাজে তিনি জীবনের সবচেয়ে বড় ও সফল ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে ইউনেস্কোর কাছে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে প্রবর্তনের খসড়া প্রতিবেদন তিনিই দাখিল করেন। তারই সফল প্রচেষ্টায় মহান একুশে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক ভাষা আন্দোলন দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলো।

পাকিস্তানী আমলের মৌলভীবাজার শহরে তখনকার গড়ে উঠা নব্যসুশীল সমাজে “আলী ভাতৃত্রয়” বলে তাদের পরিবারের এক গৌরবময় পরিচয় গড়ে উঠেছিল। আর এ তিন জনের দু’জন ছিলেন উচ্চপদস্ত সরকারী চাকুরে শ্রদ্ধেয় সৈয়দ মোস্তফা আলী, সৈয়দ মর্তুজা আলী ও উপমহাদেশের শ্রেষ্ট রম্যলেখক সুসাহিত্যিক সৈয়দ মোজতবা আলী। একটি বিনোদনমুলক শ্রুতিমধুর বিষয় উল্লেখের প্রবল ইচ্ছাকে দমাতে পারছি না। তাদের পরিবারে ভাই-বাবা-চাচা মিলে ৫জনের সংক্ষিপ্ত নাম এস এম আলী। তাঁর বাবা-চাচা তিন জনই সৈয়দ মোস্তফা আলী, সৈয়দ মুর্তজা আলী, সৈয়দ মুজতবা আলী এবং তদীয় বড় ভাই সৈয়দ মোহাম্মদ আলী। এই বড় ভাই সৈয়দ মোহাম্মদ আলীই ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ইংরেজী সংবাদপত্র “দি ডেইলি ষ্টার” এর স্থপতি ও প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।সফল কূটনীতিক হিসেবে ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসে কাজ করেন। তিনি ১৯৮২-১৯৮৬ সালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের স্থায়ী মিশন এবং ১৯৮৬-১৯৮৮ সালে ভারতে বাংলাদেশি হাই কমিশনার হিসাবে কাজ করেছেন। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় সৌদি আরবের জেদ্দায় কনসালের দায়ীত্ব সফলতার সাথে পালন করেন। তিনি ভুটান, ইরান, লেবানন, তুর্কমেনিস্তান, ফ্রান্স, সিরিয়া এবং পর্তুগালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন দক্ষতা ও সফলতার সাথে।
এসব ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এসময় তিনি ইউরোপে স্বল্পোন্নত দেশের রফতানি শুল্কমুক্ত করার কাজ করেছিলেন এবং তা বাস্তবায়িত হয়। ২০১৪ সালে তিনি ভারতে দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার নিযুক্ত হন যেখানে এখনও তিনি সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। আসন্ন ডিসেম্বরে তিনি তার চুক্তিভিত্তিক চাকুরী থেকে অবসরে যাচ্ছেন। সবকিছু মিলে তার উজ্জ্বল কর্মমুখর জীবন জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে শিক্ষনীয় এক উজ্জ্বল পথিকৃতের জীবনকাহিনী হয়ে থাকবে।

মোয়াজ্জেম আলীর জন্ম ১৯৪৪ সালের ১৮ই জুলাই বর্তমানের সিলেটে। বাবা ছিলেন সিভিল সার্ভিসের মানুষ। বাবার সাথে ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে বৃটিশ-ভারতের বেশ কিছু শহর। সেই ছেলেবেলা থেকে কৈশোর আর যৌবনের এক বিস্তীর্ণ সময় পূর্ব-পাকিস্তানের বহু শহর-নগর-বন্দর দেখেছেন। সেই দেখা শুধু কি দেখা, জ্ঞানের ঝাঁপি ইচ্ছেমত ভরে নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন জীবনে। কৈশোর-যৌবনের অমূল্য সেই সময়কে কাজে লাগিয়েছেন। তাইতো দেখা যায়, মেধাবী আলী ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম হয়ে বিজ্ঞানে এম এ পাশ করে বেরিয়ে আসছেন। 

১৯৬৮সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। নিয়োগ পান আমেরিকার ওয়াশিংটনে। শুরু হয় পেশাভিত্তিক কূটনৈতিক জীবন। কিন্তু তার চাকুরীর তিন বছরের মাথায় কল্পিতরাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথে রাজনৈতিক এক ভয়ঙ্করী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে বাঙ্গালী জাতিগোষ্ঠী। রাতের অন্ধকারে ক্ষুধার্থ হায়েনার মত দাঁত খিচিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পিশাচ নরপশু পাকিস্তানী সামরিক চক্র, নিরীহ বাঙ্গালীদের উপর। নরপশুরা ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে চালায় পরিকল্পিত নরহত্যা, আগুন লাগিয়ে বাড়ী-ঘর জ্বালানো আর নারীধর্ষণ। 
মাতৃভূমির উপর বিদেশী পাকিস্তানীদের এমন বর্বর অত্যাচারের ঘটনায় বাঙ্গালী এস এম আলীর রক্ত টগবগিয়ে উঠে। ভাবেন জাতিগোষ্ঠীর এমন ভয়ঙ্কর দূর্দিনে তার মত বিদ্যানের দূরে থাকা কোনভাবেই সংগত নয়। সুদূর আমেরিকায় থেকেও চাকুরীর মায়া পরিত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন জানিয়ে পাকিস্তান মিশন ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন। ভয়ঙ্কর অনিশ্চিত যুদ্ধকালীন সময়েই পাকিস্তানীদের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে দ্বিধাহীন চিত্তে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ নেন। চলে আসেন স্বাধীনতার পক্ষে। আরো অনেকের সাথে যোগদিয়ে গড়ে তোলেন অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের ওয়াশিংটন মিশন।

ওয়াশিংটনে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ মিশন। আরো দু’একজনের সাথে এস এম আলী হন সেই মিশনের জন্মদাতাদের একজন। শুরু হয় ভিন্ন কূটনৈতিক জীবন। কাজ শুরু হয় যুদ্ধরত বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে বিদেশীদের সমর্থন আদায়ের কাজ। ঝাপিয়ে পড়েন সৈয়দ মোয়াজ্জেম। প্রথমেই কাজ শুরু করেন আমেরিকার সমর্থন আদায়ে। দুনিয়ার সকলেই কিছু না কিছু জানেন এ সময় আমেরিকার নিক্সন সরকার পাকিস্তানের পক্ষে বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশ্যে তাদের ৭তম নৌবহর পাঠিয়েছিল। এমনতরো রাজনৈতিক শত্রুকে চটজলদি পক্ষে আনা চাট্টিখানি কথা ছিলনা। লবিং শুরু হয় মোয়াজ্জেম আলীর। সম্বিৎ ফিরে আমেরিকার। এক পর্যায়ে বন্ধ হয় পাকিস্তানের পক্ষে আমেরিকার বিভ্রান্ত উকালতির। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ স্বীকৃতি দিতে থাকে। স্বাধীনতা আসে বাংলাদেশের। কিন্তু তৎপরতা বন্ধ হয়নি মোয়াজ্জেম আলীর। সামনে তার বাংলাদেশকে গড়ে তোলার আরেক যুদ্ধ অপেক্ষা করছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে হবে। 
যেই চিন্তা সেই কাজ। শুরু হয় নতুন করে দেশ গড়ে তোলার এক অন্তহীন সংগ্রাম। যে সংগ্রামে এখনও মোয়াজ্জেম আলী নিবেদিত প্রাণ।
হারুনূর রশীদ, লণ্ডন ২৪শে নভেম্বর ২০১৯

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT