1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
স্মৃতি-বিস্মৃতি - মুক্তকথা
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১০ অপরাহ্ন

স্মৃতি-বিস্মৃতি

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ৪৬১ পড়া হয়েছে

স্মৃতির আয়নায়

স্বাধীনতা পরবর্তী হাটি হাটি পা-পা করে যখন মৌলভীবাজার গড়ে উঠছিল তখনই নির্মিত হয় পশ্চিমবাজারেরও পশ্চিমে বড়হাট লাগোয়া এক সময়ের শ্মশান ঘাটের কাছের পুরােনো জমিতে একটি আধুনিক সিনেমা হল। নাম ছিল ‘কুসুমবাগ’। এখন আর সিনেমাহলটি ওখানে নেই। ইতিহাসের গর্ভে বিলীন হয়েগেছে। কালের রাহু গ্রাস আর প্রাগৈতিহাসিক ধর্মীয় চেতনা সিনেমাহলটিকে অকালেই গ্রাস করেছে। এখন সেখানে গড়ে উঠেছে ভিন্ন নমুনার ব্যবসা কেন্দ্র কুসুমবাগ নামের সুপার মার্কেট।

‘কুসুমবাগ সিনেমা হল’, মৌলভীবাজার

তবে কাল যতই গ্রাস করুক না কেনো, মানুষের মন থেকে কেউ পারেননি মুছে দিতে সিনেমাহলটির নাম। এখনও বাসে চড়ে বসলে বাস কন্ডাক্টরের মুখে শুনা যাবে হারিয়ে যাওয়া সেই নাম-‘কুসুমবাগ’- ‘কুসুমবাগ’! এই কুসুমবাগ সিনেমা হলের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে যৌবনের দীর্ঘ একটি সময় ব্যয় করেছেন মৌলভীবাজারের পঞ্চাশ-ষাট-সত্তুর দশকের লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, অভিনেতা ও রাজনীতিক শ্রী সুনির্মল কুমার দেব মীন।

নিজ হাতে গড়া খামারের বৃক্ষ ছায়ায় ব্যবসাগুরু আব্দুর রহমান রুপি মিয়া।

কুসুমবাগ আর প্রবাসী সুফিয়ান মিয়া। রহস্যময় সময়ের কালো গহ্বরে ডুবে যাওয়া দু’টি নাম। প্রথমটি সৃষ্টি আর পরের নামটি তার শ্রষ্টার। সৃষ্টি আর শ্রষ্টা উভয়ই আজ কালের গোলচক্কর থেকে ছিটকে পড়েছে অনেক অনেক দূরে। যেখানে কারো হাত নেই। টেনে তোলার হয়তো বা কারো সাধ্য নেই। কালের যাত্রায় কুসুমবাগের প্রতিষ্ঠাতা মালিক সুফিয়ান মিয়া প্রয়াত হয়েছেন অনেক আগেই।

পাশে বসা বড় সন্তানকে নিয়ে খামার কর্মীদের সাথে আব্দুর রহমান রুপি মিয়া।

এই সুফিয়ান সাহেবকে নিয়ে মজার একটি গল্প আছে। তখন ১৯৭০সাল। উত্তাল সারা পূর্বপাকিস্তান তথা এখনের স্বাধীন বাংলাদেশ। পাকিস্তানী সামরিক জান্তা তখন নির্বাচন ঘোষণা করেছে। আমাদের অনেকেই হয়তো জানেন না যে, সময়ের আবর্তে হারিয়ে যাওয়া প্রয়াত এই সুফিয়ান মিয়াই ১৯৭০সালে সাধারণ নির্বাচনে মৌলভীবাজার থেকে আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে মনোনয়নের জন্য দরখাস্ত করেছিলেন। প্রয়াত নেতা মুক্তিযোদ্ধা মির্জা আজিজ আহমদ বেগসহ কতিপয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সমর্থক সুফিয়ান ভাইকে সমর্থন করেছিলেন।
এদিকে ওই সময় মৌলভীবাজারে ছিলেন সিলেটের আবু সুফিয়ান নামে অপর একজন। ঘটনাচক্রে শুনেছিলাম, তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা চার খলিফাখ্যাত  প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকের সাথে তিনি রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সেই সম্পর্কের সুবাদে মৌলভীবাজার থেকে যখন এমপি পদে কারো কোন নাম সময় মতো ঢাকায় পাঠানো হচ্ছিল না তখন প্রয়াত ছাত্রনেতা আব্দুর রাজ্জাক সাহেব ওই আবু সুফিয়ান সাহেবের নাম মৌলভীবাজারের এমপি হিসেবে খাতায় তুলে নেন। যতদূর মনে আছে সে সময় রাজ্জাকভাই ছিলেন সারা পূর্বপাকিস্তানের আওয়ামীলীগ এমপি ও এনএনএ দের নাম সংগ্রহের দায়ীত্বে। পুরোনো সিলেট জেলার দায়ীত্বে ছিলেন সিলেটের আওয়ামীলীগ নেতা প্রয়াত জনাব ফরিদগাজী সাহেব।

‘ইনকিউবিটার’এ মোরগের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটা পরখ করছেন জনাব আব্দুর রহমান।

মৌলভীবাজার থেকে সে সময় আওয়ামীলীগের পক্ষে কোন এমপি প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছিল না। কেউই আওয়ামীলীগের হয়ে মুসলীমলীগের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে রাজী হচ্ছিলেন না। এদিকে রাজ্জাক সাহেব ফরিদগাজী সাহেবকে সারা সিলেটের এমপি’দের নামের তালিকা পাঠানোর তাগিদ দিচ্ছিলেন। ফরিদ গাজী সাহেব এই নাম সংগ্রহের কারণে সে সময়ে তিন বার মৌলভীবাজার এসেছিলেন কিন্তু কোনবারই নাম নিয়ে যেতে পারেননি। মনে আছে সে সময়ের আওয়ামী লীগ নেতাগন শহরের নামী-ডাকি উকীল প্রয়াত আব্দুল মোহিত চৌধুরী, অধ্যাপক ও উকীল প্রয়াত আব্দুল মুঈদ চৌধুরী, প্রয়াত আব্দুল মজিদ খাঁ মোক্তার এবং প্রয়াত সৈয়দ সরফরাজ আলী মোক্তার সাহেবকে এমপি হিসেবে ভোটে আওয়ামীলীগের পক্ষে দাড়াবার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তারা তাদের নিজেদের কারণ দেখিয়ে দাড়াতে চাননি। এমন দুরবস্তার সময়ই রাজ্জাকভাই মৌলভীবাজারের এমপি হিসেবে সিলেটের আবু সুফিয়ান সাহেবের নাম আওয়ামীলীগের খাতায় তুলে নেন। এদিকে প্রয়াত মির্জা আজিজ বেগভাই, প্রয়াত শিক্ষক সৈয়দ আব্দুল মতিনভাইয়েরা ধরে নিলেন যে কুসুমবাগের সুফিয়ান মিয়া সাহেবকে নমিনেশন দেয়া হয়েছে। তারা সুফিয়ান মিয়া সাহেবকে জানালেন যে তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। সেদিনই সন্ধ্যায় কুসুমবাগ চত্বরে খুশীর মশালমিছিল বের হয়েছিল। তার পরের ঘটনা স্থানীয় চিন্তায় আরো অতুলনীয় ঐতিহাসিক ছিল। আমি কুসুমবাগ চত্ত্বরের মিছিল নিজ চোখে দেখে চৌমুহনায় গিয়ে তৎকালীন ছাত্রলীগের অনেকের কাছেই বলি। ঘটনার আকষ্মিকতায় তৎকালীন ছাত্রলীগের প্রায় সকলেই রাজ্জাকভাইয়ের দেয়া আবু সুফিয়ান সাহেবের এ মনোনয়নকে মেনে নিতে পারেনি। ওই রাতেই আমরা অনেকেই দু’টি গাড়ী ভাড়া করে সিলেটে গাজী সাহেবের কাছে যাই এবং সারা রাতের দেন-দরবারের পর গাজী সাহেবকে দিয়ে প্রয়াত আবু সুফিয়ান ভাইয়ের নামের বদলে আজিজ ভাইয়ের নাম যোগ করিয়ে নেই। সে অনেক কাহিনী অন্য সুযোগে অন্যদিন তুলে ধরার আশারাখি।

খামার বাড়ীর একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে পুত্র সাইফুর রহমান বাবুল।

পরে আমরা গাজী সাহেবের সাথে আলাপ করতে গিয়ে বুঝতে পারি যে মনোনয়ন পাওয়া আবু সুফিয়ান আমাদের মৌলভীবাজার কুসুমবাগের মালিক সুফিয়ান মিয়া নহেন। তিনি সিলেটের একজন আবু সুফিয়ান চাকুরীতে মৌলভীবাজারে ছিলেন। এতোসব ঘটনা পর্দার আড়ালেই ঘটে গিয়েছিল, অনেকেই অনেক কিছু জানতেন না। রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ও একমাত্র সাংবাদিকতার কারণে আমার পক্ষে কিছুটিা হলেও জানার সুযোগ হয়েছিল। এতোসব জানার পরেও সুফিয়ান মিয়া সাহেবের মাঝে কোন ব্যতিক্রমী প্রতিক্রিয়া দেখতে পাইনি। এই ছিলেন সময়ের সেই বিরাট ব্যক্তিত্ব প্রয়াত মোহাম্মদ সুফিয়ান মিয়া। খুবই দিলখোলা বড় মাপের মানুষ ছিলেন এই সুফিয়ান মিয়া।
তার মৃত্যুর পর তদীয় ভ্রাতা প্রবাসী আব্দুর রহমান সকল দায়ীত্ব নিজ হাতে তুলে নেন। তিনি এখনও জীবীত আছেন। বার্ধক্যের শেষ দরজায়। মৌলভীবাজার শহরের উত্তর-পশ্চিমে সিলেটের দিকে যেতে শহর থেকে দু’ মাইলের মাথায় “শ্রীরাই নগর” গ্রামে তাদের পৈত্রিক বাড়ী। বাড়ীখানা এখনও আছে। শ্রীহীন রাই পড়ে আছেন সেই আগের মতই। পুরোনো দিনের কথা এখনও পথিককে জানান দিয়ে যায়।

পোষ্যদের সাথে সাইফুর রহমান বাবুল।

একজন সফল প্রবাসী জনাব আব্দুর রহমান ওরপে রুপি মিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রবাসের কঠিণ-কঠোর পাথুরে জীবন থেকে ইস্তেফা দিয়ে স্থায়ীভাবে  মৌলভীবাজারে নতুন করে আবাস গড়ে তুলেন। স্বাধীনতার পর সারা বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র বিলেত প্রবাসী যিনি তার একবন্ধুসহ মোটরগাড়ীযোগে বৃটেন থেকে মৌলভীবাজার এসেছিলেন। শুরু করেন নতুন উদ্যোমে কাজ। কুসুমবাগকে আধুনিকতার ছাঁচে ঢালাই দিয়ে সফলভাবেই ব্যবসা করতে থাকেন। এরই পাশাপাশি তিনি একটি খামার বাড়ী গড়ে তোলার কাজে হাত দেন। গড়ে উঠে ‘রূপনগর’ নামের একটি খামার বাড়ী। মৌলভীবাজার শহর থেকে মাইল তিনেক দক্ষিনে নিতেশ্বর নামক পাহাড়ী পল্লীতে। পুরোপুরি বিদেশী আদলে না হলেও আমাদের দেশের তুলনায় অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনায় তার নিজের মত করে  নতুন সাজে সাজিয়েছেন ‘রূপনগর’কে। ওই খামারবাড়ীতে দেশীয় সকল ধরনের শাক-সব্জি, রবিশষ্য, ধানসহ বহু ধরনের উৎপাদনের কাজ চলে।
রূপ নগর খামারে ধানের মৌসুমে কয়েক ডজন লোক কাজ পায়। এমনিতেই সার্বক্ষনিকভাবে এই খামারে কাজে নিয়োজিত আছেন ৫জন কর্মী। ব্যবসা হিসেবে কুসুমবাগ আজ আর নেই ঠিকই কিন্তু এলাকা কুসুমবাগ আজও জীবিত আছে কর্মজীবী আর সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। হারুনূর রশীদ, লণ্ডন ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার ২০১৯সাল

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT