স্বেচ্চাসেবা
কয়ছর আহমদ
দয়া, মায়া, কোমল হৃদয় দিয়ে হাসি মুখে কারো দিকে তাকানো, কিংবা কারো বিপদে আপদে উদার হস্ত প্রসারিত করে নীপিড়ীত, নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ান এবং বিনিময়ে কোন প্রতিদান আশা না করে; তবে এটাই হচ্ছে সব চেয়ে উত্তম চ্যারিটি। চ্যারিটি বা স্বেচ্ছা সেবা একটি মহৎ কাজ। আমরা বলি দান বা সাহায্য। আরবিতে এটিকে বলা হয় জাকাত, ছদকা। সম্পদ দান করলে তাতে সম্পদের কোনো ক্ষয় হয় না বরং বৃদ্ধি পায়, এমন কথা বহু ধর্মে আছে। সম্পদকে পবিত্র করতে হলে অব্যশই স্বেচ্ছাসেবায় দান করতেই হবে। জন্ম থেকে যে জ্ঞান, শক্তি ও সম্পদ মানুষ পেয়েছে তা অব্যশই মানবতার কল্যানে ব্যয় করতে হবে। একজন বিত্তবানের ঘরে যদি পর্যাপ্ত খাদ্য মওজুদ থাকে আর তার প্রতিবেশী যদি অনাহারে ভুখা থাকে, তা হলে তার সে খাদ্য পবিত্র হবেনা। একজনের উচ্ছিষ্ট্য খাবার, আপনি চেয়ার-টেবিলে বসে অনেক আইটেম দিয়ে আহার গ্রহণ করলেন, আর বাড়ীর চাকর-বাকর, গরীব মিসকীনদেরকে মাঠিতে বসায়ে খাওয়ালেন। এটি মানবতার অপমান। একজন মানুষের পুরানো কাপড়, কিংবা পরিত্যাক্ত জিনিসপত্র যা তিনি ব্যবহার না করেন, তা দান করলে তাতে কোন পূণ্য বা প্রতিদান নাই। নিজে যা পড়েন, নিজে যে খাদ্য গ্রহণ করেন, চ্যারিটি হিসাবে তাহাই দান করা উত্তম সেবা। অর্থাৎ উত্তম বস্তু দান করাই উত্তম কাজ। ভালো কাজের প্রতিদান ভালো ছাড়া আর কী হতে পারে।
জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে সমান ভাবে দেখার মতো মন-মানসিকতা অর্জন করা সবচেয়ে বড় কাজ। ‘লোক দেখানোর মন-মানসিকতা নিয়ে কোনো কাজ না করাই উত্তম।’ তোমাদের মনে যা আছে, তোমরা প্রকাশ করো অথবা গোপন রাখো, আল্লাহ উহার হিসাব তোমাদের নিকট থেকে গ্রহণ করবেন। সুতরাং আমাদের লক্ষ্যের কারণে আমাদের অনেক ভালো কাজ যাতে ব্যর্থ না হয়, তার জন্য আমাদের সতর্ক থাকা উচিত।
চ্যারিটি নিজের ঘর থেকেই শুরু করা সবচেয়ে মূল্যবান কাজ। যেকোন মানুষ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা মিলে একটা পটে কিছু সঞ্চয় করে কোনো অতি দরিদ্র লোককে সাহায্য করা, যেমন তার ঘর-বাড়ী নির্মাণ, সন্তানদের লেখা-পড়া কিংবা চিকিৎসার জন্য দান করার ভিন্ন নামই হচ্ছে চ্যারিটি বা স্বেচ্ছা সেবা। এই মহৎ কাজে সমাজের অন্যান্য সক্ষম ব্যক্তিদেরকেও উৎসাহিত করা, সকলের সন্মিলিত প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে এই মহৎ কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং এটাকে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। যাতে সমাজের অবহেলিত জনগণ এই অনুদানকে ব্যবহার করে নিজেকে সাবলম্বি করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে এবং দরিদ্রতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
একটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো, পৃথিবীর সকল যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ সমূহে এক দিকে অন্যায় ভাবে মানুষকে নির্যাতন করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে, মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, আবার অন্য দিকে এই একই মানুষের অপর একটি অংশ নিজের জীবনকে বাজী রেখে সেখানে ঔষধ, পানি, খাবার নিয়ে আর্থ মানবতার সেবায় নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিচ্ছে, ঘর বাড়ী নির্মাণ করে দিচ্ছে, অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এর চেয়ে উৎকৃষ্ট মহানুভবতা আর কী হতে পারে। যারা এই সমস্ত কাজে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে, এই পৃথিবীতে মানুষ হয়ে জন্ম গ্রহণ করা তাঁদের সার্থক।
 |
প্রবাসী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী বিগত কয়েক বৎসর যাবৎ তাদের নিজ নিজ এলাকায় পবিত্র রমজান উপলক্ষে চাল, ডাল, তেল সহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে থাকেন, আবার অনেকেই মানুষের ঘর-বাড়ী নির্মাণ করে দিচ্ছেন। অর্থাৎ মানুষের মধ্যে দান করার প্রবণতা অনেকটা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা খুবই ভালো লক্ষন। আবার প্রবাসীদের মধ্যে অনেক প্রবীণ লোক আছেন, যারা অনেক কষ্ট করে দেশে সম্পদ গড়েছেন। কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে এসে অনেকেই জানেননা তাঁদের এই সম্পদ এখন কি করবেন। কারণ ছেলে মেয়েরা এই সব বিষয়ে আগ্রহী নয়। নতুন প্রজন্মের এসকল মানুষদের তাঁদের অর্থ ও সম্পদ সমাজের অবহেলিত মানুষের কল্যানে সঠিক পথে দান করার জন্য তাঁদেরকে আগ্রহী করে তুলতে পারলে এবং সততা, আন্তরিকতা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার সাথে সম্পদের সঠিক ব্যবহার করে গরীব মানুষের উন্নয়ন করতে পারলে তবেই না সমাজের জন্য কিছু করা হলো বলে দাবী করা যাবে।
যারা দেশান্তরীত হয়ে বিদেশের মাটিতে আসেন তাদের প্রায় সকলেই নিজেদের জন্মভুমি ত্যাগ করে শূন্য হাতে পরবাসী হয়ে থাকেন। এখন তারা তাদের নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন, নিজেদের সন্তানদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। আমাদের সকলকে অব্যশই মনে রাখতে হবে যে, এই সমস্ত দেশে যদি আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, সুষম বন্টন, সমতা, সবার জন্য সমান শিক্ষা, চিকিৎসা, সম অধীকার, ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, বৈষম্যহীন সমাজ এবং সম্পদের সুষম বন্টন অর্থাৎ রাষ্টের উন্নয়নের ফসল সমাজের গরীব ও অবহেলিত জনগণের মধ্যে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকতো, তা হলে কোন প্রবাসী মানুষের জন্যই প্রবাসে থাকা সম্ভব হতোনা; সম্পদের অধিকারীও কেউ হতে পারতেন না। মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকালে মানুষ যে চিত্র দেখতে পায় তা ভয়াবহ। ওসব দেশে মানুষকে পুরোদস্তুর দাস হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মহিলারা তাদের ইজ্জ্বত নিয়ে ফিরে আসতে পারছেনা। যারাই সমাজের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে চান, অবশ্যই এই সমস্ত বিষয় মাথায় নিয়ে কাজ করতে হবে।
এ বিশ্বের সকল শাস্ত্রই ন্যায়পরায়নতা, সদাচারণ ও আত্নীয় স্বজনকে দানের সুপারিশ করেছে এবং নিষেধ করেছে অশ্লীলতা, অসৎ কর্ম ও সীমা লঙ্গন করতে।