1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
আয়া সুফিয়া বিতর্ক - মুক্তকথা
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন

আয়া সুফিয়া বিতর্ক

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : বুধবার, ২৯ জুলাই, ২০২০
  • ৮৯১ পড়া হয়েছে

-এস চৌধুরী।। 

আয়া সুফিয়া নিয়ে বিতর্ক বেশ ভালো করেই জমে উঠেছে। মোস্তফা কামাল পাশার ডিক্রি বাতিল করেছে তুরস্কের ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ’ আদালত জুন মাসের ১০তারিখ। এর ফলে মিউজিয়াম হতে মসজিদ এর অবস্থায় ফিরে গেছে আয়াসোফিয়া। এ নিয়ে বিতর্কে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে তুরস্কের ভিতরে বাহিরে।

আয়া সুফিয়া কার? এটা কি সেকুলারিষ্টদের মিউজিয়াম থাকবে? নাকি ট্রাডিশনালিস্টদের মসজিদ হয়ে থাকবে? নাকি এটাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে অতীত ইতিহাসের একটি ক্যাথিড্রাল বানিয়ে, অথবা একটি খ্রিস্টীয় চ্যাপেল অথবা ব্যাসিলিকা?

২০১৭ সালে আমি বেড়াতে গিয়েছিলাম ইস্তাম্বুল। আয়াসোফিয়ার ভিতরের ছবি সেই সময়ের তোলা।

সবাই যার যার দাবি নিয়ে এগিয়ে আসছে। ইস্তাম্বুল নিয়ে দেশীয় ও বিদেশী রাজনীতি আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে৷ এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি মাথা গরম করে আছে গ্রিস ও ফ্রান্স৷ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ ও কম যায় না৷ আমেরিকা রাশিয়া ও তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পিছপা হয়নি। এমনকি ভ্যাটিকানও এই নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে৷
ইস্তাম্বুল যার পূর্ববর্তী নাম কনস্টান্টিনোপল। বলা হয়ে থাকে কনস্টান্টিনোপল মধ্যযুগীয় বিশ্বের রাজধানী ছিল। সেই রাজধানী যদি অতীত বিশ্বের রাজমুকুট হয়ে থাকে তাহলে আয়া-সুফিয়া সেই রাজমুকুটের ঝলমলে হীরকখণ্ড বা রাজমণি। আয়া সুফিয়ার কৃতিত্ব এখানেই৷ তার আকর্ষণ যুগের পর যুগ কালের পর কাল শতাব্দীর পর শতাব্দী একটুও মলিন হয়নি৷

আয়া-সোফিয়ার আবেদন একটু ও মলিন হয় নি!

আয়াসুফিয়া নিয়ে কথা বললে ইতিহাস চলে আসে। বিশ্ব বিখ্যাত সোফিয়া মসজিদ যা কিছুদিন আগেও একটি মিউজিয়াম ছিল। ১৯৩৪ সালে ২৪ নভেম্বর মন্ত্রী পরিষদের একটি মোশন প্যাস করার মাধ্যমে আয়া সোফিয়াকে সরকারী ভাবে মিউজিয়াম হিসাবে ঘোষণা করা হয়। তখন তুরষ্কে মোস্তফা কামাল পাশার সেক্যুলারিষ্ট সরকার ক্ষমতায় ছিল। কিসের জন্য বা কি কারনে তা করা হয়েছিল সে ব্যাপারে কিছু বিস্তারিত ধারনা পাওয়া যায় এমন একটি আর্টিকল নিম্নে দেওয়া হল৷ এই ঘটনার সাথে তুরস্কের- বলকান ও গ্রীসের রাজনৈতিক ও সে সময়কার আর্থিক অবস্থা ও অনেকটা দায়ী বলে মনে করা হয়। উল্লেখ্য বলকান ও গ্রীস তুরস্ক হতে সদ্য স্বাধীন হয়েছিল তখনকার সময়৷

https:// www-worldbulletin-net.cdn.ampproject.org

আশি বৎসর মিউজিয়াম থাকার পর২০২০ জুন মাসের ১০ তারিখ শুক্রবার তুরস্কের সর্বোচ্চ এডমিনিস্ট্রিব কোর্ট রায় দেয় যে – ১৯৩৪ সালের মন্ত্রীপরিষদের আদেশ অকার্যকর- কারণ আয়া সোফিয়া দান দলিলে মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন কাজে ব্যাবহারের অনুমোদন নেই৷ তাই এই স্থাপনা অন্য কাজে ব্যাবহার করা যেতে পারে না৷ সেই আদেশ অনুযায়ী বর্তমান সরকার আয়া সোফিয়াকে মিউজিয়াম হতে আবার মসজিদে ফিরিয়ে নিয়ে নিয়েছে৷ পর্যটন মন্ত্রণালয় হতে ধর্মীয় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে৷

আশি বৎসর মিউজিয়াম থাকার পর আয়া সুফিয়া আবার মসজিদ হিসাবে প্রত্যাবর্তন করেছে৷

আবার মসজিদ আয়া সোফিয়া৷

কোর্টের রায়ের ফলে যদিও রক্ষণশীল মুসলমান এতে সন্তুষ্ট হয়েছে, কিন্তু সংখ্যালঘু সেক্যুলারিস্ট মুসলমান ও কিছু ধর্মভীরু মুসলমান এর বিরুদ্ধে। ধর্মভীরু মুসলমানদের যুক্তি অন্য ধর্মের স্থাপনা কোনোভাবেই মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। আর সেক্যুলারিস্ট মতবাদীদের কাছে মসজিদের চেয়ে মিউজিয়াম হিসাবে এর অবস্থান অনেক ধর্মনিরপেক্ষ।

সবচেয়ে বড় বাধা নিয়ে এসেছে তুরস্কের বাইরের খ্রিস্টীয় সম্প্রদায়ের দেশ হতে। গ্রিসের কালচার মিনিস্টার তুরস্কের কোর্টের ডিসিশন কে সভ্য দুনিয়ার সাথে “open provocation” বলে উল্লেখ করেছেন। ক্যাথলিক ধর্মের প্রধান পোপ ফ্রান্সিস এই বলে উনার হতাশা ব্যক্ত করেছেন – “thoughts go to Istanbul” অর্থাৎ উনার চিন্তা ইস্তাম্বুল কে ঘিরে। ইস্টার্ন অর্থডক্স চার্চের প্রধান Patriarch Bartholomew 1 সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছেন” এই পরিবর্তনের ফলে লক্ষ-লক্ষ ক্রিশ্চিয়ান অত্যন্ত হতাশ হবে।” এছাড়া ইউনেস্কো জানিয়েছে যে এই পরিবর্তনের ফলে গ্রিসের সাথে উত্তেজনা বাড়বে যেখানে লক্ষ লক্ষ অর্থডক্স ক্রিশ্চিয়ান বসবাস করে।

দুই ধর্ম একসাথে নাকি তুই ধর্ম মুখামুখি?

মূলত কনস্টান্টিনোপল মুসলমানের বিজয়ের পর হতেই আয়াসোফিয়া মসজিদ হিসেবে কাজ চালিয়ে আসছিল। চৌদ্দশ তেপ্পান্ন সালের মুসলমানরা কনস্টান্টিনোপল বিজয় লাভ করেছিল। তার পূর্বে আয়া সোফিয়া বিভিন্ন ক্রিশ্চিয়ান ধর্মীয় গোষ্ঠীর ব্যাসিলিকা অথবা ক্যাথিড্রাল হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।

ইতিহাসের বিভিন্ন সময় আয়াসুফিয়া এর ব্যবহার৷

ধর্মভীরু মুসলমান বা সেকুলারিষ্টদের মতামত বোধগম্য৷ কিন্তু সেক্যুলারিস্ট ইউরোপিয়ান এবং গ্রীস বা খ্রিস্টীয় ধর্মীয় নেতাদের মন্তব্য অত্যান্ত বেমানান৷ গ্রীসে তুর্কি সাম্রাজ্যের ফেলেআসা কয়টি মসজিদ গ্রীসিওরা রক্ষা করেছে? বা বর্তমানে মুসলমানের জন্য কয়টি মসজিদ করার অনুমতি দিয়েছে গ্রীস? তাছাড়া খ্রিস্টীয় ধর্মীয় নেতাদের অজানা নয় তাদের কতটি চার্চ মুসলমানদের হাতে বা অন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের হাতে বিক্রি করেছে৷ কত শত চার্চকে আবাসিক কাজে বা ভিন্ন ভিন্ন কাজে ব্যবহার করার জন্য বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে৷ এখানে পাঁচ শত বছর পুরাতন চার্চ যা গত পাঁচ শত বৎসর মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল তা নিয়ে ধর্মীয় বিভেদ জাগিয়ে তোলা কতটুকু বুদ্ধি যুক্তিসঙ্গত তা কি একবার ভেবে দেখেছেন?

চার্চ বা মসজিদ ধর্মীয় সম্পত্তি। কিন্তু ক্যাথিড্রাল বা বেশিলকা এগুলা সরকারি কাজ চালানো হতো তা ছিল রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি।সংগত কারণেই মুসলিম বিজয়ের পর সে সকল সরকারি সম্পত্তি ফাতে মোহাম্মদের হাতে চলে আসে। তখন তার সামনে দুটি রাস্তা খোলা ছিল। এক সরকারি কাজের জন্য এই স্থাপনাকে ব্যবহার করা। দ্বিতীয়তঃ এটা ধ্বংস করে পূর্ববর্তী রাজত্বের গৌরবের প্রতীক নষ্ট করে দেয়া।ফাতে মোহাম্মদ ছিলেন বীরপুরুষ। তিনি ঐতিহ্যমন্ডিত এই হাজার বৎসরের স্থাপনাটি সম্মানী দিয়ে কিনে নেন। যদিও সে আমলের রাজা-বাদশা হিসাবে ও সে আমলের নীতি অনুযায়ী এসব কিছুই করার দরকার ছিলনা। তারপরও তিনি উদারতা দেখিয়ে ছিলেন। তিনি জীবদ্দশায় এ সম্পত্তি ওয়াকফ করে দেন ধর্মীয় কাজে ব্যবহারের জন্য। তারপর অনেক উন্নয়ন কার্য চালানো হয়। ভূমিকম্প প্রবন এলাকায় এই বিশাল ইমারত অবস্থিত। ভূমিকম্প প্রতিরোধের জন্য প্রচুর টাকা খরচ করে এর ভিত্তি মজবুত করা হয়। চারদিকে সুউচ্চ মিনার তৈরি করা হয়। ভেতরে খ্রিস্টান দেবদেবীর মূর্তি ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি দিয়ে আড়াল করে রাখা হয় বা ঢেকে দেওয়া হয়। এই স্থাপনার আকৃতি ও প্রকৃতিগত এত পরিবর্তন হয়েছে যাকে পুরাতন চার্চের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার দাবী’তে বুদ্ধির যুক্তির কোন চিহ্ন থাকে না৷ হয়তো এতে ধর্মীয় বিদ্বেষ থাকতে পারে৷

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ওসমানী খেলাফতের পতন ঘটে। মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে সেক্যুলার নেতৃত্ব ক্ষমতায় আসে। ১৯৩৪ সালে সরকারি একটি ডিগ্রী বলে প্রায় পাঁচশত বছরের মসজিদ মিউজিয়ামে রূপান্তর করা হয়। কামাল পাশা ছিলেন কট্টর সেকুলার পন্থী। তিনি তার মতবাদ আয়াসুফিয়ার উপর প্রয়োগ করেন। আয়া সুফিয়া কে সেক্যুলার বানান। শুধু তাই নয়। মুস্তফা কামাল মসজিদে আজান নিষিদ্ধ করেন। বোরকা হিজাব সহ ইসলামিক পোশাক আশাক নিষিদ্ধ করেন। মুসলমানদের ধর্মীয় উদ্দেশ্যে দাড়ি রাখা নিষিদ্ধ করেন। এমনকি হঠাৎ করে আইন জারি করে আরবি ফার্সি নিষিদ্ধ করে তার পরিবর্তে রোমান বর্ণমালা চালু করেন।

মোস্তফা কামাল পাশা বিতর্কিত ছিলেন চরমপন্থী সেক্যুলারিস্ট হিসাবে। কিন্তু জাতীয় স্বাধীনতার জন্য তুরস্কের কাছে উনি জনপ্রিয় নেতা। উনার অনেক অনেক কার্যক্রম আলোচিত-সমালোচিত হয়ে আসছে৷
2020 সালের জুলাই মাসে তুরস্কের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কোর্ট মোস্তফা কামাল পাশার আদেশ বেআইনি হিসাবে ঘোষণা দেয়। এবং বর্তমান সরকার প্রধান রজব তাইয়্যেব এরদোগান আবার সেই আয়াসুফিয়া মসজিদে ফিরিয়ে নিয়ে যান। এটা তুরস্কের হাজার বছরের ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার প্রচেষ্টা মাত্র৷

আয়া সুফিয়া মুসলিম খ্রিস্টান এর মিলনকেন্দ্র হতে পারে৷

এটা নিয়ে তর্ক বিতর্ক হতে পারে যে এটা মসজিদ হিসাবে নাকি মিউজিয়াম হিসেবে জনগণের জন্য উত্তম ব্যবহার হবে৷ কিন্তু চার্চ হিসেবে ফিরে যাওয়ার আশা-আকাঙ্ক্ষা ধর্মীয় বিবাদ বিদ্বেষ থাকতে পারে কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই নগণ্য ৷ এজন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বক্তব্য উন্মাদনার পরিচয় দেয় বুদ্ধিবৃত্তির পরিচয় বহন করে না৷

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT