1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
সাহিত্যে উন্মত্ত মানুষ ও ডাইনী কাহিনী - মুক্তকথা
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন

সাহিত্যে উন্মত্ত মানুষ ও ডাইনী কাহিনী

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০২০
  • ৪৫৩ পড়া হয়েছে

অনুঢ়া বৈভব মালঞ্চ

**ডাইনী-শিকার

অনূঢ়া বৈভব মালঞ্চ
।।

অতিমাত্রিক ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ যার বিভিন্ন জাদুকরী ক্ষমতা আছে, তারা মানুষের যেকোন ক্ষতি করতে পারে, তাদের অভিশাপে মানুষের ক্ষতি হয়, রোগশোক-মহামারী নেমে আসে…বাস্তবে তন্ত্র মন্ত্র ও জাদুবিদ্যায় পারঙ্গম মানুষের আদপে কোন ক্ষমতা না থাকলেও সাধারণ মানুষের অজ্ঞানতা, কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাসের কারণে এসব মানুষকে অতিমানবিক ক্ষমতাসম্পন্ন হিসেবে আবির্ভূত করতো। তাদের ডাইনী নামে ডাকা হতো যার ৭০ শতাংশই ছিল নারী। প্রাচীন মধ্যযুগে এই অন্ধবিশ্বাস প্রায় সব সমাজেই প্রচলিত ছিল।
তখন ১৪০০ শতকের শেষদিক..পোপ ইনোসেন্ট ৮ এর লেখা the hammer of witches বইতে ডাইনী সম্পর্কে প্রচলিত বিভিন্ন লোককাহিনী, মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ডাইনী সম্পর্কিত কিছু তথ্য যাকে তিনি প্রমান হিসাবে আখ্যায়িত করেন এবং আধ্যাত্মিক বিশ্লেশণের উপর ভিত্তি করে ডাইনী চিহ্নিতকরণ ও তাদের বিচার কিভাবে করা উচিত সে বিষয়ে আলোচনা করেন। এই বইটিতে উল্লেখিত তথ্যের আলোকে সমাজের সুবিধাভোগী জনগণ কিছু মানুষকে(যার অধিকাংশই ছিল নিরীহ) ধরে এনে কোন তথ্য প্রমান ছাড়াই দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দিত। ব্যাক্তিগত বিদ্বেষ থেকে বা বিশেষ সুবিধা লাভের জন্যই সাধারণত এ কাজ করা হত। নানারকম প্রপাগান্ডা বা অপপ্রচার সাধারন মানুষকেও ডাইনী শিকারের এই ঘৃণ্য প্রক্রিয়াতে শামিল করতো। এর পেছনে ছিল সাধারণ মানুষের অজ্ঞানতা, অসচেতনতা। যারা এসব অপপ্রচার চালাত, তারা নিরীহ মানুষের চরিত্রে কাল্পনিক হিংস্রতা আরোপ করা, ভৌতিক হিসাবে প্রচার করা, প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ বা সংক্রামক রোগকে ডাইনীর কারসাজি বা অভিশাপ হিসেবে গুজব ছড়ানো ইত্যাদি অপপ্রচার চালিয়ে সাধারণ মানুষকেও এদের প্রতি নির্দয় ও হিংস্র করে তুলত। ফলে বলি হত কিছু নিরপরাধ মানুষ। ১৫০০ থেকে ১৭০০ শতক পর্যন্ত এই সংখ্যা টা ছিল ১২০০০ এর মত। আর এই নিয়ম বহির্ভূত কার্যে জড়িত ছিল প্রায় এক লক্ষ মানুষ।
ইনিটারেস্টিং বিষয় হল এই ডাইনী অপবাদে যাদের পুড়িয়ে মারা হতো তার ৭০ শতাংশই ছিল নারী,যাদের বেশিরভাগ ভেষজ বা আয়ূর্বেদিক চিকিৎসা করতো।আর আমরা ডাইনী বলতেই মানসপটে যে ধরণের ছবি আঁকি, তা হলো লম্বা ধারাল নখ, দাঁত, উস্কখুস্ক চুল, জ্বলজ্বলে চোখ আর হাতে জাদুর লাঠি থাকা এক ভয়ালদর্শন রমনী বা বৃদ্ধা নারী যে কিনা মানুষকে ভেড়া বানিয়ে রাখে কিংবা মানুষের রক্ত পান করে কিংবা দেবদেবীর পায়ে বলি দেয়। নিমিষেই অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে কিংবা যেকোন অলৌকিক কার্য সম্পাদন করতে পারে! কিন্তু বাস্তবতা কি বলে? বা কি হতে পারে? ষোড়শ শতকে যাদের ডাইনী সন্দেহে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল,তারা কি আসলেই মানুষকে ভেড়া বানিয়ে দিতে সক্ষম ছিল? তাহলে যখন তাদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছিল তখন কেন তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারল না? পারেনি কারণ তাদের আসলেই কোন অতিমানবিক জাদুক্ষমতা ছিল না।

**মব জাস্টিস
মব শব্দের আবিধানিক অর্থ উত্তাল জনতা বা হুজুগে জনতা। এই হুজুগে জনতা সব দেশে সব কালেই ছিল, আছে। এরা যেকোন বিষয় নিয়ে আকষ্মিক এক হয়ে যেতে পারে বা অতি অল্প সময়ের ভেতর যেকোন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে সক্ষম। তা হত্যাও হতে পারে। এ পর্যন্ত অনেক মব লিণ্চিং বা উত্তাল জনতার বিচারকার্যের খবর আমরা কাগজে দেখেছি। বর্তমান যুগে মব জাস্টিসের আরেকটি শক্তিশালী রূপ হল অনলাইন জনতা। কোন একটি বিষয় বা ইস্যু অনলাইনে ছড়িয়ে পড়লেই জনতার স্রোত প্রবল বেগে একদিকে ধাবিত হয়। তখন কেউ যদি স্রোতের উল্টা হাঁটার চেষ্টা করে সে ওই প্রবল স্রোতের আগে টিকতে পারে না। তাহলে কি এই জনতা এতই ক্ষতিকর?
আসুন একটু দেখি উত্তেজিত জনতার মধ্যে কোন কোন বিষয কাজ করে–
প্রথমত-আবেগ, উত্তেজিত জনতার মধ্যে দেখা যায় আবেগ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হবার প্রবণতা। এদের একজনের আবেগ অপরজনের মধ্যে সণ্চারিত হয় খুব দ্রুত।
দ্বিতীয়ত-চিন্তার সাদৃশ্য, উত্তাল জনতার মধ্যে বিভিন্ন বয়স, পেশা , শিক্ষার লোক থাকলেও তাদের মধ্যে চিন্তার সাদৃশ্য দেখা যায়। যেকোন একটা বিষয বা ইস্যুতে তাদের মতামতটা অভিন্ন হয়।
তৃতীয়ত- মব বা উত্তাল জনতার মধ্যে বিচার বিবেচনাবোধ হ্রাস পায়। তারা নিজে যেটা ভাবছে সেটাকেই সঠিক বলে ধরে নেয়। এবং এর বাইরে সকল মতামতকে অযৌক্তিক বলে উড়িয়ে দেয়। এবং ভালোমন্দ বোধ লোপ পেয়ে নিজের সিদ্ধান্তকে একাত্ম করে ফেলে।
চতুর্থত- উত্তাল জনতার মধ্যে কোন ব্যক্তি তার নিজস্ব দায়ভারের কথা স্মরণ রাখে না। সে ভাবে সে যা করেছে তার জন্য সে একা দায়ী নয়। মব বা জনতা দায়ী। যেকারণে ফলাফলের তোয়াক্কাও করেনা।
পঞ্চমত-উত্তাল জনতা নিজেদেরকে অসীম ক্ষমতাবান ভাবে। তাদের কাছে তখন কোনকিছুকেই অসাধ্য বলে মনে হয় না। এবং সবচেয়ে ভয়ংকর যেটা– ব্যাক্তির মধ্যে ব্যাক্তিসত্তা নয়, জনতাসত্তা কাজ করে প্রবলভাবে। ফলে জনতার কারো মাঝে ব্যাক্তিসংযম কাজ করে না। একটা জটলা বা ভিড়ের মধ্যে কারোর যখন ব্যক্তি সংযম থাকে না, তার ফলাফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে?
মব জাস্টিস আর ডাইনী-শিকারের কি সম্পর্ক? আমার কাছে মনে হয় ডাইনী নিধন ১৭০০ শতকে শেষ হয়ে গেলেও ডাইনী শিকারের প্রতিরূপ এখনো বিদ্যমান। তখন ধর্মযাজক বা সমাজের প্রভাবশালী লোক কোন মানুষকে ফাঁসিয়ে, মব সাইকোলজির ব্যাবহার করে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, আজও মব সাইকোলজির কারণেই যেকোন বিষয় নিয়ে জনতা উত্তাল হয়ে যায়(বেশিরভাগ অনলাইনে)। তখন সেই সম্মিলিত জনমতের বাইরে কেউ কোন কথা বললেই সেও জনতার আক্রোশের শিকার হয়।
প্রাচীনকালে এই মনের মনস্তাত্বিক নিয়ন্ত্রণ ছিল সমাজের কতিপয় প্রভাবশালী মানুষের হাতে, এখনো তাই। যারা প্রতিক্রিয়াশীল মানসিকতাকে কাজে লাগিয়ে জনমতের নিয়ন্ত্রিত করতে পারে। যেকোন ঘটনায় এই মব চট করে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে ফেলে নিজেই তাকে কি শাস্তি দেয়া যায় তার নানান উপায় বের করতে থাকে। এখন অবশ্যই এটা ভেবে দেখার সময়, সংখযাগরিষ্ঠের মতামতকে কতটুকু গ্রহন বা গুরুত্ব দেয়া উচিত। রাজধানীর বাড্ডায় যে মাকে ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে মেরে ফেলা হল, সেটাও জনতারই কাজ। সেই জনতা, যাদের কোনরূপ বিবেক-বিচার-বুদ্ধি নেই, পরিণামের ভয় নেই,আত্মঅনুশোচনা নেই। বিচারহীন মনোভাবই দায়ী এর জন্য। এই বিচারহীনতার চর্চা অনেককাল থেকে চলে আসছে। যেকোন বিষয়ে আমরা প্রভাবিত হই খুব দ্রুত, জাজ করি ইচ্ছেমত, সিদ্ধান্তে নেই আরো দ্রুত। আমাদের মনে হয়, সিংহভাগ জনতার কথাই যৌক্তিক। তাই জন্য একজন নিরপরাধ মানুষ মরে গেলেও আমাদের আত্মঅনুশোচনা হয় না। আমরা অনলাইনে যেকোন ঘটনা বিচার বিশ্লেষন করে চট করে যেকোন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে যাই।
তাহলে ষোড়শ শতকের ডাইনী নিধন প্রক্রিয়া কি আসলেই এখন আর নেই? নাকি বহাল তবিয়তেই বিদ্যমান আছে? অন্য রূপে, অন্য সংজ্ঞায়। নিজে বিচার করুন।
বি:দ্র: অতি দীর্ঘ রচনা মনোযোগ দিয়া পড়িবার জন্য সবিশেষ ধন্যবাদ 🙂 🙂
আর উক্ত রচনা লিখিতে গিয়া নানাবিধ তথ্যের জন্য গুগল চাচার শরণাপন্ন হইয়াছি। তাই উনার চরণে প্রণাম।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT