1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
এখানেই আমার লজ্জ্বা! - মুক্তকথা
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৮ অপরাহ্ন

এখানেই আমার লজ্জ্বা!

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৪৩১ পড়া হয়েছে

মুক্তকথা প্রতিবেদন॥ ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস! দিনটি যখন আসে শুরু হয় নতুন নতুন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা বানিয়ে তাদের নাম ফলক লিখিয়ে উপহার দেয়ার ধুম। মনে হয় যেনো মুক্তিযুদ্ধ এখনও চলছে আর যারা নতুনভাবে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন তাদেরকে উৎসাহ দেয়ার জন্য এমন ব্যবস্থা। সে রকম একটি উপহার আমিও পেয়েছি। নিজেকে মহিমান্বিত করে তোলার এমন একটি গল্প যদি না বলি তা’হলে যারা এতো কষ্ট করে ৪৯বছর পর আমাকে এমন উপহার দিলেন তাদের প্রতি নির্ঘাত অবিচার করা হয়। অথচ বলতে আমার খুব লজ্জা বোধ হচ্ছে। কারণ যুদ্ধ করেছিলাম আজ থেকে উনোপঞ্চাশ বছর আগে। লজ্জ্বার আরো বড় একটি কারণ আছে। আর সেটি হলো, যারা আদৌ যুদ্ধ করেনি বরং ভারতে গিয়ে ভাল ভাল হোটেল রেষ্টুরেন্টে আলিশানভাবে থেকে সময় কাটিয়েছে, তারা দিব্বি নির্বিঘ্নে আমার বহু বহু আগে এসব সনদ পেয়ে মুঁচে তা দিয়ে সময় অতিবাহিত করেছে এখনও করছে। আরো বহুজনকে চিনি যারা, ভূঁয়া সংগঠক সেজে ভারতে দামী দামী হোটেল রেষ্টুরেন্টে থেকে সময় পাড় করেছে, যুদ্ধতো দূরের কথা কয়েকদিনের সামরিক প্রশিক্ষনেও যায়নি, দেশে ফেরৎ এসে তারা সুযোগের অপরিসীম সদ্ব্যবহার করেছে। এমন নমুনার বহুজনকেই চিনতাম এবং এখনও বহুজনকে চিনি যারা এসকল কাজে সিদ্ধ হস্ত।

অথচ এই আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আরো দশপনেরোজনের সাথে মিলে শহরের আনসার এডজুটেন্টের অস্ত্রাগার লুট করে অস্ত্র সংগ্রহ করেছি  সন্মুখ সমরে শেরপুর যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছি। পরিখা খননে সহায়তা করেছি। পাক বাহিনীর বিমান হামলার সময়ও জীবনের মহা ঝুঁকি নিয়ে গাড়ীতে মাইক লাগিয়ে সারা শহর ও শহরতলি ঘুরে প্রচারাভিযান চালিয়েছি। এক ডজনের অধিক সহযোগীকে নিয়ে ভারতে গিয়েছি। ভারতে যাবার পথে চাতলাপুর চা-বাগানের গোদামঘরকে লুটপাট থেকে রক্ষা করে কয়েক ডজন চা-শ্রমিককে ট্রাক ও ট্র্যাক্টরে করে ভারতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রশিক্ষনে যাওয়ার আগে ভারতে থাকাকালীন সময়ে দেশের ভেতরে সশস্ত্র হয়ে ঢুকে দু’টি অপারেশনে সফল হয়েছি এরপর ভারতে গিয়ে নিজে বিএলএফ’এর প্রশিক্ষন নিয়ে ১৩জনের একটি গেরিলা দলের সহদলপতি হয়ে দেশের ভেতরে ঢুকেছি। সে কি দুর্বিসহ দুঃসাহসিক সময়! একটি ছোট্ট যুদ্ধ চিন্তার পরামর্শের জন্য এক সহযোগীর বাড়ী যাবার পথে কাকতালীয়ভাবে রাতের আঁধারে পাকহানেয়াদের হাতে ধরা পড়ে সে কি যন্ত্রণাদায়ক সময় পাড় করেছি। এতোসব কিছুর পর আমার ভাগ্যে এতোদিন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধার তকমা লাগেনি। অথচ আমার মৌলভীবাজার শহরে মুক্তিযোদ্ধা সকলকেই আমি চিনি। তাদের বহুজনকেই আমি বিভিন্ন নমুনায় সাহায্য সহায়তা করেছি। এক নেতা যে আমার সহপাঠীবন্ধু ২৫শে মার্চ খুব ভোরে আমার বাসায় তাকে লুকিয়ে রাখতে গিয়ে জীবনের ভয়াবহ ঝুঁকি নিয়ে আমার ছোট ভাই প্রয়াত কয়ছর রশীদ পিরুনকে পাহাড়ায় রেখে আমি নিজে অন্যত্র গিয়ে আত্মরক্ষা করেছিলাম। আমার এ বন্ধু যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছে কিন্তু আমার নাম দিতে ভুলে গিয়েছিল! এমনসব কত কাহিনী। এ লজ্জ্বা রাখি কোথায়?

১৪ ডিসেম্বর আর ১৬ডিসেম্বর। দু’টো দিন আমাদের জাতীয় ইতিহাসে আছে এবং থাকবে। ভনিতা রেখে সরাসরিই লিখি। ১৪ ডিসেম্বর, পরিকল্পিতভাবে বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবী হত্যার দিন। আর ১৬ ডিসেম্বর, পরিকল্পিতভাবে বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবী হত্যায় যারা শরিক ছিল তাদের প্রকাশ্য পরাজয় ও আত্মসমর্পনের দিন। একটি অপরটির পুরোপুরি বিপরীতমুখী। দু’দিন আগে যারা নক্সা বানিয়ে আমাদের হত্যা করে পুরো জাতিসত্ত্বাকে পঙ্গু বানিয়ে নির্মূল করতে চেয়েছিল তারা কিন্তু তাদের সে কাজে সফল হয়েছিল। যদিও দু’দিন পরই ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের কোটী কোটী মানুষের সামনে পরাজয় স্বীকার করে নিতে হয়েছিল। সেই পরাজয়ের ইঙ্গিত পেয়েই তারা এমন পাশবিক হত্যায় হাত রাঙ্গিয়েছিল।

তারা পরাজিত হয়েছিল ঠিকই কিন্তু ৪ বছরের মাথায় আবার তারা ঘাপটি মেরে বসে থাকা তাদের অনুচরদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জয়ী হওয়া এই আমাদের উপর। একাজেও তারা সফল হয়েছিল। সেই সফলতার পথ ধরে আজো তারা আমাদের শাসিয়ে যাচ্ছে ধর্মের আবরণে। অথচ আমরা তাদের উত্তরসূরিদের নিয়ে তাদেরই অনুশাসনের ভেতরে থেকেই পালন করি বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস আর বিজয় দিসব!

এরা মুসলমানদের ব্যবহার করে পাকিস্তান নামের কল্পিত রাষ্ট্র করেছিল তাদের ব্যবসায়িক লুটপাটের জন্য। সে রাষ্ট্র গঠনের সাথে সাথেই শুরু হয় আমাদের সম্পদের লুটপাট। আজ থেকে ষাট বছর আগে ওরা ধর্মের নামে, আমাদের ভূখা রেখে, নতুন রাজধানী রাওয়ালপিন্ডি নির্মাণ করেছিল। তাদের কাছে ধর্ম ছিল আমাদের সম্পদ লুট করে নেয়ার শক্তিশালী হাতিয়ার। এখন আবার সেই ঘাতকরাই ধর্মের আলখাল্লায় বাংলাদেশকে মুসলিম বাংলা বানাতে চায়। বানাতে চায় এক নতুন মুসলিম পাকিস্তান। উদ্দেশ্য ওই একই। লুণ্ঠন!

যে পাকিস্তানের সাথে লড়াই করে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম, লড়াই করে বিজয় এনেছিলাম, যে আদর্শকে মাথায় রেখে পূর্বপাকিস্তান নাম বদলে যে ভূখণ্ডটি বাংলাদেশ নাম ধারণ করেছিল সে আদর্শ আজও বিড়ম্বিত। আমরা পেয়েও হারিয়েছি। এখানেই আমার লজ্জ্বা। এ লজ্জ্বা রাখি কোথায়!
হারুনূর রশীদ, লণ্ডন,  বৃহস্পতিবার,  ১৭ ডিসেম্বর ২০২০

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT