1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
এরিক গর্ডন, কিংবদন্তীর এক সম্পাদকের নাম - মুক্তকথা
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন

এরিক গর্ডন, কিংবদন্তীর এক সম্পাদকের নাম

হারুনূর রশীদ॥
  • প্রকাশকাল : শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১
  • ৩২৩ পড়া হয়েছে

মুক্তকথা প্রতিবেদন॥ এরিক গর্ডন। একটি নামই শুধু নয় একটি প্রতিষ্ঠান। কেমডেনের সকল মহলে বিশেষ করে সংবাদপত্র আঙ্গিনার সকলেই এই এক নামে তাকে চিনতো। মুলতঃ বাম রাজনীতির মানুষ। বৃটেনের শ্রমিক রাজনীতির ধারায় কিছুটা ধনবাদী মানসিকতা ঢুকে পড়ায় সরাসরি রাজনীতি থেকে সরে এসে সংবাদপত্র প্রকাশনার অঙ্গনে নিজেকে জড়িয়ে নেন প্রগতিশীল রাজনীতির ধারায় টিকে থাকার কল্যাণী মানসে।

চলে গেলেন সেই মানুষটি উননব্বই বছর বয়সে। তার এই দীর্ঘ জীবনের পথ পরিক্রমায় পেয়েছেন নগন্য কিন্তু দিয়েছেন এবং রেখেগেছেন অমূল্য এক সম্পদ, একখানা সুপ্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্র। যে নাম কেমডেনের সকল মানুষের মুখে মুখে। কেমডেনের সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে সুপরিচিত, নন্দিত সংবাদপত্র “কেমডেন নিউ জার্ণাল”। তার সৃষ্টিশীল চিন্তাধারায় প্রতিষ্ঠিত “কেমডেন জার্ণাল”ই মৃত্যুর পর তাকে বলেছে “লেখা-লেখির কিংবদন্তী”!

১৯৯৮ সালে লণ্ডনের “দি স্পাইচ” রেস্তোরাঁয় আয়োজিত এক গুরুত্বপূর্ণ কম্যুনিটি সভা শেষে আয়োজিত ভোজে সম্পাদক এরিক গর্ডন। ছবি: মুক্তকথা সিন্দুক

হ্যাঁ ঠিকই তিনি ছিলেন অত্রাঞ্চলে লেখা-লেখির বা কালির জগতের এক কিংবদন্তীর মানুষ। তারই সৃষ্টিশীল চিন্তার ফসল বিনা খরচে অর্থাৎ নিখরচায় কেমডেনের সকলেই পড়তে পারবেন সংবাদপত্র। আর সেই সংবাদপত্রই হলো “কেমডেন নিউ জার্ণাল” যার তিনিই ছিলেন ব্যতিক্রমী অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। একটানা দীর্ঘ আটত্রিশ বছর তিনি সম্পাদনা করে গিয়েছেন নিজের শিশুপুত্রের আদরে এই পত্রিকাখানা।

সম্পাদক এরিককে নিয়ে কেমডেন নিউ জার্ণালে যৌথভাবে লিখেছেন রিচার্ড ওসলি, টম ফুট ও ডন কেরিয়ার। তাদের সে লেখা থেকে যা জানা যায়, তা’হলো- সে ছিল ১৯৮০ সাল। পুরোনো কেমডেন জার্ণাল পত্রিকার ৯জন সাংবাদিককে ছাটাই করা হয়। সেই থেকে শুরু ছাটাই বিরুধী আন্দোলন। এরিক সক্রিয়ভাবে সে আন্দোলনে গতি সৃষ্টি করেন। ওখান থেকেই ১৯৮২ সালে পৌঁছে জন্ম নেয় ‘কেমডেন নিউ জার্ণাল’। এরিক হন তার প্রথম সম্পাদক। এরিকের চিন্তাজগতে কাজ করতো সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকা। কেমডেন জার্ণাল নামের এই সংবাদপত্রটি নিয়ে এরিক ভাবতেন, তিনি চাইতেন কেমডেন জার্ণাল হবে গণমানুষের সংবাদপত্র। আরো স্পষ্ট কথায় বললে, কেমডেন জার্ণাল হবে পাঠকের সংবাদ পত্র। আর এই পত্রিকাও কাজ করবে মানুষের কল্যাণে তার পাঠকদের জন্য। মালিক পক্ষের জন্য কোন ধরনের লাভ বা মুনাফা অর্জনের তাগিদে নয়। পত্রিকার কাজে বা অফিসে তিনি ‘বস’ শব্দটি ব্যবহারে কখনই অনুরাগী ছিলেন না, বরং তিনি মনে করতেন পাঠকগনই সংবাদপত্রের মূল মালিক এবং সে বাণীকে সামনে রেখেই তিনি কাজ করে গেছেন আমৃত্যু। তার এই মত তাকে আমৃত্যু পথ দেখিয়ে নিয়ে গেছে।

কেমডেনের বাঙ্গালী সম্প্রদায় বিষয়ক একটি সভায় অতিথি এরিক গর্ডন। লন্ডনের রেস্তোরাঁ “দি স্পাইচ”। ছবি: মুক্তকথা সিন্দুক

কেমডেন জার্ণালে লেখা তার প্রথম ছেলে কিম-এর রচনা থেকে জানা যায় এরিক যেদিন মারা যান সে লগ্নটি ছিল ইয়াহুদীদের পালিত পবিত্র ‘ইস্টার মানডে’। এরিক, ধর্মে ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন। তিনি ব্যক্তি স্বাতন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষ ছিলেন, ছিলেন একজন কম্যুনিস্ট। এরিকদের বাড়ী ছিল উত্তর মানচেষ্টারে। পারিবারিকভাবে এরিখরা অর্থনৈতিক দিক থেকে সংকটে ছিলেন কিন্তু সাংস্কৃতিক দিক থেকে ছিলেন খুবই সমৃদ্ধ একটি পরিবার। ঘরে থাকতো হরেক রকমের বাদ্যযন্ত্র। এরিকের বাবা শাম মিউজিক হলে এক্সজিলোফোন বাজাতে ভালবাসতেন। এরিক তার বড় ভাই জেফরি’র কথায় রাব্বি প্রশিক্ষণ পরিত্যাগ করে বেরিয়ে আসেন এবং কম্যুনিষ্ট চিন্তাধারায় উজ্জ্বীবিত হন। কারণ তার বড় ভাই ছিলেন একজন ত্যাগী কম্যুনিষ্ট। ১৮ বছর বয়সে এরিক মানচেষ্টারের ইয়ঙ্গ কম্যুনিষ্ট লিগে যোগ দিয়েছিলেন। এরিক বলেছিলেন তিনি এক ধর্ম বদলিয়ে আরেকটি নিয়েছেন। যুদাইজম-এর জন্য মার্ক্সিজম!
চিনের চেয়ারম্যান প্রয়াত মাও সে তুং-এর চিন্তাভাবনা এরিককে একসময় খুব উদ্বুদ্ধ করে তুলেছিল। সেসময় তিনি তার প্রথম স্ত্রী মেরি সহ পুত্র কিমকে নিয়ে চিন দেখতে যান। দু’বছর থেকে হংকং হয়ে ফেরৎ আসার সময় উত্তর চিনের একটি ট্রেনে চিনা পুলিশ এরিককে সপরিবারে আটক করে নিয়ে যায় গুপ্তচরের অপবাদে। সে এক দুঃখেভরা কষ্টের ইতিহাস ছিল এরিকের জীবনে। দুই দুইটি বছর চিনা পুলিশের হেফাজতে কাটাতে হয় তাকে। অবশ্য অনেক আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দু’বছর পর ১৯৬৯সালে ছাড়া পান।
মানুষের সাম্যতায় উজ্জ্বীবিত এক তরুণের জীবন বহু ঘাতপ্রতিঘাত, সংশয় আর সংগ্রাম পেরিয়ে ফুলেল সমাধি লাভ করেছে ব্রাইটনের একটি কবরস্থানে। স্ত্রী, ৩ সন্তান ও ৬ পৌত্র-পুত্রি রেখে গেছেন এই বীর জীবন যুদ্ধা। তার অনন্ত যাত্রা কন্টকমুক্ত হোক, অজানা অনন্ত সময়ের প্রতিটি ক্ষন ফুলে ফুলে ভরে উঠুক এ কামনাই করি।

১৯৯৮ সালে সম্পাদক এরিকের সাথে এক ঘনিষ্ট মূহুর্তে মুক্তকথা সম্পাদক হারুনূর রশীদ। ছবি: মুক্তকথা সিন্দুক

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT