1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
সাত সাগর আর তেরো নদীর পাড়ে... - মুক্তকথা
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২২ অপরাহ্ন

সাত সাগর আর তেরো নদীর পাড়ে…

হারুনূর রশীদ॥
  • প্রকাশকাল : রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৫৩৫ পড়া হয়েছে
সাতসমুদ্র তেরো নদীর ওপারে গিয়ে আবাস গড়ে তোলা জালাল উদ্দীনকে নিয়ে আমাদের ছোট্ট কাহিনীর দ্বিতীয় অংশ।

(২)

জালালুদ্দীনের কাছে আমি জানতে চাইলাম তার বাবা মুনির উদ্দীনের বিষয়ে।

দিনটি ছিল সোমবার আগষ্টের ১৬ তারিখ। কুচার মহলের ফকরুল ইসলামকে সাথে নিয়ে রওয়ানা হলাম জালাল উদ্দীনের বাড়ীর উদ্দেশ্যে। ফকরুল ইসলাম জালাল উদ্দীনের চাচাতো ভাই। ফকরু নিজেই একদিন আমাকে জানালো সে জালাল উদ্দীনকে দেখতে যাবে। চাইলে আমি তার সংগ নিতে পারি। এমন একটি সুযোগের অপেক্ষায়ই ছিলাম আমি। সাথে সাথেই রাজী হয়ে গেলাম।

লণ্ডনের বহু ধনী এলাকার একটি ‘নর্থ উড হীল’। এমনিতেই এদেশে অধিকাংশ ধনী মানুষজন গ্রামে বাস করে। গরীবরাতো গ্রামে বাস করেই। তবে অধিকাংশ গরীব শহরের অলি-গলিতে বাস করে। ধনবাদের বিকাশের সাথে সাথে এদেশের গরীব লোকজনকে পেটের দায়ে কাজের তাগিদে গ্রামের চিরাচরিত মনোরমা আত্মমুগ্ধকরা পরিবেশ ছেড়ে শহরে উঠে আসতে হয়েছে। অভিশপ্ত ধনিকতন্ত্রের এটিও একটি ধারা। পুঁজিবাদ বা ধনবাদ বিশ্বব্যাপী এমন ধারায়ই কাজ করে।

ফকরুদ্দীন আমার ছোট ভাইয়ের বয়সী। সেই ছোটবেলা থেকেই তার সাথে পরিচয়। খুব সাংস্কৃতিমনা মানুষ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রয়াত জলিল(আমেরিকায় বাস করতো) , ফকরু ও বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী আব্দুর রাজ্জাককে নিয়ে, অনেকটা, বলতে গেলে সাংস্কৃতিক আন্দোলন শুরু করি। গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে নাটক করেছি, শুধুমাত্র আমাদের সংস্কৃতিকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে শহর-গ্রামের আনাচে কানাচে মানুষের মাঝে পৌঁছে দেয়ার এক অজানা-অজ্ঞাত আকর্ষণ থেকে। জুড়ি থেকে বড়ইউড়ি আর শেরপুর থেকে সমশের নগর, খাঁচা ছাড়া পাখীর মত বনবাদারে উড়ে বেরিয়েছি সংস্কৃতিকে হৃদয়ে ধারন করে। আমি যখন বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে জুড়িতে নাটক করছিলাম সে রাতেই আমার প্রানপ্রিয় মা এ ধরাধামের মায়া ত্যাগ করে স্বর্গের পথে রওয়ান দিয়েছিলেন। দূর্ভাগা আমি মা’কে তার মৃত্যুসজ্জ্বার পাশে বসে দেখার সৌভাগ্য পাইনি। প্রিয়দর্শিনী আমার এই জননীই নিজের জীবনের বিনিময়ে আমার জীবনকে গড়ে দিয়েছিলেন। অতি অল্প বয়সে দুরারোগ্য কর্কটরোগে আমার মা মারা যান। এই মা-ই আমার সাংস্কৃতিক মন গড়ে দিয়েছিলেন সেই দুর অতীতের বাল্যে। মা সারাদিন বাড়ীতে থেকে সকল কাজে গুনগুনিয়ে রাধারমনের গান করতেন। বহু রাত, বহু দিন মায়ের কাছে বসে মন্ত্রমুগ্ধের মত গান শুনতাম। মা ঘরে গান গাইতে গাইতে রান্না-বান্না করতেন। তখন আমিই ছিলাম পরিবারে মায়ের একমাত্র সাথী।

সংস্কৃতির এই অঘোষিত আন্দোলনে শরিক হতে কেউ শিখিয়ে দেয়নি, বলেও দেয়নি। নিজে থেকেই কেনো জানিনা মনে হয়েছিল সারা পাকিস্তানী আমলে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি এক অন্ধ ধর্মীয় গোড়ামীর আলখেল্লার ভেতরে বন্দী হয়ে গিয়েছিল। আমার মনে আছে পাকিস্তানী আমলে আমরা একটি দেশপ্রেম মূলক নাটক করতে গিয়ে স্থানীয় ডিআইবি থেকে অনুমতি পাইনি। নজরুল জয়ন্তী করতে গিয়ে আমাদের নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল অনুষ্ঠানে কি কি আমরা পরিবেশন করতে পারবো। সম্ভবতঃ সেসব কারণ থেকেই স্বাধীনতার পর মনে এমন চেতনার উদয় হয়েছিল। সে সময়ের ডিআইবি ওয়াচার আমার শ্রদ্ধেয় হাবিবুর রহমান(হাবিব ভাই, জানিনা এই মানুষটি এখন জীবিত আছে কি-না) আমাদের খুব সুনজরে রাখতেন। আগে ভাগে অনেক কিছু বলে দিতেন। এই হাবিবুর রহমান, নিজের জীবনের দায় নিয়ে ২৬মার্চ ১৯৭১ইং তার বাসার আলমারীর পেছনে আমাকে লুকিয়ে রেখে পাকজান্তার হাত থেকে বাঁচিয়ে ছিলেন।

জালাল পত্নি সালেহা আহমদ, জালাল উদ্দীন, লেখক হারুনূর রশীদ ও ফকরুল ইসলাম। ছবি: মুক্তকথা।

যৌবনে জালাল উদ্দীন। ছবি: সংগ্রহ

বাবা-মায়ের সাথে একমাত্র কন্যা সুরাইয়া। ছবি: মুক্তকথা

ফকরুকে সাথে নিয়ে আগষ্টের এক তারিখে ট্রেনে চেপে বসলাম। গন্তব্য ‘নর্থউড হীল’। বিলেতের ট্রেন, খুব একটা সময় লাগেনি। অনুমান ৪৫মিনিট রেল ভ্রমনের পথ পাড়ি দিয়ে ষ্টেশনে গিয়ে পৌঁছলাম। ষ্টেশনে নেমে হেঁটে হেঁটে গিয়েই উনার বাড়ীতে উঠলাম। যতদূর মনে আছে ১৭ নম্বর ঘর। চারিদিকে খুব সুনসান নীরবতা! কোন মানুষজন নেই মনে হলো। এমন ব্যতিক্রমী নীরব এলাকা আমি কম দেখেছি। অনেকক্ষন পর একজন মানুষকে রাস্তা দিয়ে হেটে যেতে দেখলাম। আমরা ঘরের ঘন্টায় চাপ দিলাম। বেরিয়ে আসলেন ওনার স্ত্রী সালেহা আহমদ ও একমাত্র মেয়ে সুরাইয়া আহমদ। আমাদের ঘরের ভেতরে আমন্ত্রন জানালেন।

ভেতরে ঢুকে বসার ঘরে গিয়ে বসলাম। ধীরে ধীরে জালাল উদ্দীন উপর থেকে লাঠিতে ভর দিয়ে নেমে আসলেন। বয়সের ভারে নুব্জ। হাতে একটি লাঠি নিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে চেয়ারে বসলেন। এতো বয়স কিন্তু মেজাজ ঠিক আগের মতই হাসি-খুশীর মনে হলো। হাসিমাখা মুখে আমাকে বসতে বললেন। বুঝতে পারলাম আমাকে চিনতে পারেননি। অবশ্য চিনতে পারার কথাও নয়। সেই কবে কোন সময়ের ছোটবেলায় দিগম্বর এই আমাকে দেখেছিলেন। সে কি আর মনে থাকার কথা! লণ্ডনে বহু বহু আগে সে ১৯৯৫সালে মনে হয় একবার দেখেছিলাম আমাদের কেমডেন এলাকায় এসেছিলেন। সুরমা সেন্টারে কি উপলক্ষে একটি সভা ছিল। সাথে ছিলেন মৌলভীবাজারের একসময়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রবাসী প্রয়াত কদরমিয়া সাহেব। সেই যে দেখেছিলাম আর কোন দিন দেখা হয়নি।

আমাদের দু’জনকে বসার কথা বললেন। বসার পর শুরু হলো আমার সাক্ষাৎকার। গিয়েছিলাম তার সাক্ষাৎকার নিতে। দিতে হলো আমাকে। অনেক আলাপের পর আমাকে চিনতে পেরেছেন বলে মনে হয়নি। তবে আমার বাবা-দাদা ও মামাদের খুবই চিনতে পেরেছেন বুঝতে পারলাম। আমি ও আমার প্রয়াত ভাই কয়ছর রশীদ পিরুনের বাল্যের সেই দিগম্বর হয়ে গোসলের বয়ান দিতেই হেসে উঠলেন। বুঝলাম আমাকে কিছুটা স্মরণে আনতে পেরেছেন সম্ভবতঃ। এমনিতেই হাসির মানুষ তার উপর আমার গোসলের বাখানে খুব হাসলেন। শুরু হলো আমরা দু’জনে জানাজানির কথা।

প্রথমেই আমার সাথে তার কি সম্পর্ক সেই খুঁজতে শুরু করলেন। উত্তরে আমি বললাম আপনি আমার এক ছোট মামার স্কুলজীবনের সহপাঠী। এতটুকু আমি জানি। পাশেই বসা তার স্ত্রী সালেহা আহমদ সাথে সাথে উঠে জালাল উদ্দীনকে বললেন-“কেনো ভুলে গেলেন, আপনি না এখনও মাঝে মধ্যে বলেন মাসুক মামা মবইমামা! উনি সেই মাসুক মামার বড় মেয়ের জামাই। আমার চাচা শ্বশুরের ডাক নাম মবই মিয়া। আসল নাম মাহবুব উদ্দীন(মবই মিয়া)। তারা দু’ভাই ই এখন স্বর্গবাসী। সম্পর্কের ইতি টানলেন আমাকে ভাই সম্ভোধন করে। পাশে বসা স্কুল শিক্ষিকা তার একমাত্র মেয়ে সুরাইয়াও আমাকে চাচা বলে একটু মিটমিট করে হাসলো। সে হাসির অর্থ আমি বুঝতে পারিনি। 

চেয়ারে বসে খুব স্বস্তি পাচ্ছিলেন না, তার পরও স্মরণ করে করে অনেক আলাপ করলেন আমার সাথে।

শুরু করলেন তার বাবা সম্বন্ধে। (আগামী পর্বে শেষ অংশ আসবে)
এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT