1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল- সিলেট বিভাগের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেবে! - মুক্তকথা
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন

শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল- সিলেট বিভাগের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেবে!

বিশেষ প্রতিনিধি॥
  • প্রকাশকাল : বুধবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২১
  • ৬১৪ পড়া হয়েছে

 

শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল চায়ের জেলাকে পরিণত করবে শিল্পকেন্দ্রে

এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশে থাকা জলমহালকে দৃষ্টিনন্দন লেকে পরিণত করা হবে।

বিশ্বস্তভাবে জানা গেছে ২০২৪ সালের মধ্যে ৬টি প্রতিষ্ঠানই উৎপাদনে যেতে পারবে।

প্রায় ৪৪ হাজার লোকের কর্ম সংস্থান হবে।

শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল ও প্রাচীন আমলের নদীঘাট শেরপুর। সে প্রায় পয়ষস্টি কিংবা ছয়ষস্টি বছর আগের কথা। আমি তখন অনেক অনেক ছোট। বড়মামা আব্দুর রহিম(জিলামিয়া)এর সাথে তার শ্বশুর বাড়ী রেঙ্গা গ্রামে যাবো। আগের দিন থেকে মামাবাড়ীতে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তার যাত্রা পথের কিছু খাবার তৈরী করেতো দিতেই হবে। কারণ সে প্রায় পুরো একদিনের রাস্তা। সকালে যাত্রা শুরু না হলে অনেক রাত হয়ে যাবে পৌঁছাতে পৌঁছাতে। আগের দিনই শহর থেকে আসার সময় মামা নিজেই সিলেটের টিকিট নিয়ে এসেছেন। পরের দিন ভোরে যথারীতি নিয়মানুযায়ী গাড়ি বাড়ীর সামনে এসে থামলো। একবার তার শিঙ্গা বাজালো। বাড়ীর সকলেই জানতেন গাড়ী এসে আওয়াজ দেবে। কিছুটা সময় থামবে যাত্রীর পুটলা-পুটলি যদি থাকে তবে গাড়ীতে তোলে নেয়ার জন্য। গাড়ীর সাথে চালক ছাড়াও একজন সহযোগী কাজ করেন। তার কাজই হলো যাত্রী উঠানো নামানোর তদারকি করা। বাড়ীর ছেলেবুড়ো সকলে মিলে বাড়ীর পুকুরের কাছে এসে আমাদের ঘটা করে বিদায় দিলেন। আজকের দিনে যেভাবে বিদেশ যাত্রা হয়।
আমরা রওয়ানা দিলাম। দীর্ঘ পাথর বিছানো পথ ধরে থানার বাজার, আখাইলকুড়া, সাধুহাটি, কাজীর বাজার, জোগনিয়া, বেকামুড়া, সরকার বাজার পাড়ি দিয়ে অবশেষে আমরা শেরপুরে গিয়ে পৌঁছালাম। আমার জীবনে এই প্রথম শেরপুর নদীঘাট দেখা। মনের সকল আবেদন মিশিয়ে অবাক বিস্ময়ভরা মনে তন্ময় হয়ে দেখছিলাম জুড়িন্দা নায়ের গাড়ী নিয়ে পারাপার। যে নায়ে গাড়ী পারাপার করে সে নায়ের স্থানীয় নাম ‘জুড়িন্দা নাও’। সেকি অবাক কাণ্ড! নায়ের উপর উঠে গেছে গাড়ী? গাড়ীও নায়ে চড়তে পারে? মনে মনে অবাক জিজ্ঞাসা! যা আমার কল্পনায়ও কোনদিন ছিল না।

মৌলভীবাজার জেলার সরাসরি উত্তরে কিছুটা পশ্চিমে হেলে কুশিয়ারা নদীর তীরে অবস্থিত বহু প্রাচীন নদীঘাট সেই শেরপুরের ভাগ্যের চাকা এবার ঘুরতে শুরু করেছে।

এখানেই গড়ে উঠছে সারা সিলেট বিভাগের প্রানভ্রমরা মৌলভীবাজারের গৌরব ‘শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল’। এই শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে গড়ে উঠার নির্মাণকাজ সেই কবে ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয়েছে, এখনও চলছে। বেশ আগেই কারখানার জন্য বরাদ্দকৃত সব জমি মোট ৬টি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে বরাদ্দ দেয়া হয়ে গেছে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুরে ৩৫২ একর জমিতে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে।

৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ২২৮.৬০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যেখানে ১৭টি শিল্প কলকারখানা নির্মাণ করা হবে। বাকি জমিতে দৃষ্টিনন্দন জলাধার তৈরি হবে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানি কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করেছে।

মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে সরকারি উদ্যোগে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উদ্বোধনী কথায় নিজেই বলেছেন যে, “শ্রীহট্ট আর্থনৈতিক অঞ্চল” এ নামটি তারই পছন্দের মনোনীত নাম।

৬টি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৮১৮.১১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিকভাবে ১১ হাজার ৮৩ জনের কর্মসংস্থান হবে বলে জানা গেছে।

এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি জমি পেয়েছে ডিবিএল গ্রুপ। তারা পেয়েছে ১৬৭.৬ একর জমি, যেখানে এই গ্রুপ ১০টি কারখানা করবে। এ ছাড়া জমি পেয়েছে আবদুল মোনেম গ্রুপ, আয়েশা ক্লথিং কোম্পানি লিমিটেড(পলমল গ্রুপ), আসওয়াদ কম্পোজিট মিলস লিমিটেড(পলমল গ্রুপ), গ্রেট ওয়াল সিরামিকস লিমিটেড ও ডাবল গ্লেজিং লিমিটেড।

এসব প্রতিষ্ঠানে টেক্সটাইল, সিরামিক, নীট ফেব্রিক্স, ডাবল গ্লেজিং কাচ, ফসেট পণ্য উৎপাদিত হবে । পুরো অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে ৪৪ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের আশা করছে বেজা

ডিবিএল অর্থনৈতিক অঞ্চলে থাকছে টেক্সটাইল ও সিরামিক শিল্পের ১০টি ইউনিট। ইউনিটগুলো হলো জিন্নাত টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, স্পিনিং ইউনিট, রিসাইকেল পলিস্টার ইউনিট, সিরামিক টাইলস ইউনিট, স্যানিটারি ওয়ার ইউনিট, সিরামিক ফ্রিট ইউনিট, ফ্লোরাল গ্লাস ইউনিট, গ্লাস প্রসেসিং ইউনিট, ড্রাই মর্টার ইউনিট, ফসেট ইউনিট। এখানে প্রাথমিকভাবে কর্মসংস্থান তৈরি হবে ৫ হাজার ৬৩০ জনের।

বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সব জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়ে গেছে। তারা কাজও শুরু করে দিয়েছে। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশে জলমহল রয়েছে, যেটাকে আমরা উন্নত লেকে তৈরি করব। পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক জোন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেজা চায় সবার সহযোগিতা নিয়ে পরিকল্পিত উন্নয়ন হোক।’

ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম. এ. জব্বার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন যে, বাংলাদেশের উন্নয়নকে বিশ্বমানের অবকাঠামোর পর্যায়ে উন্নীত করার ক্ষেত্রে তাদের লক্ষ্যমাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এই-

ডিবিএল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক।

আগামী বছর তারা এখানে শিল্পকারখানা স্থাপন করতে পারবেন এবং সব কারখানাই ৫ বছরের মধ্যে তৈরি করে ফেলা হবে বলে তিনি জোর দিয়েই বলেন।

“ডাবল গ্লেজিং” নামের কোম্পানিটি শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে তিন একর জমি নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে তারা ৮১ লাখ ডলার বা প্রায় ৬৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।

ডাবল গ্লেজিং লিমিটেডের পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন যে, প্রায় ৩ মাস হলো তারা কাজ শুরু করেছেন। তারা আশা করছেন ডিসেম্বরে কাজ শেষ করতে পারবেন। ডাবল গ্লেজিং কাঁচ দরজা-জানালাসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা যাবে। এই ডাবল গ্লেজিং কাঁচ থাই গ্লাস থেকে পুরোপুরি ভিন্ন।

বস্ত্র কারখানা তৈরিতে মোট ১৪ একর জমি পেয়েছে পলমল গ্রুপ। এর মধ্যে ৭ একর আসওয়াদ কম্পোজিটের নামে আর ৭ একর গ্রুপের অপর প্রতিষ্ঠান আয়েশা ক্লথিং লিমিটেডের নামে।

পলমল গ্রুপের হেড অব ফাইন্যান্স কাজী আবদুল মুহিত বলেছেন, তাদের জমি নেওয়া হয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে। তবে ওখানে একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ হবে। তারা ‘হামজা নিট ডাইং মিল লিমিটেড’ নামে নতুন ইন্ডাস্ট্রি করবেন। ভবন নির্মানের জন্য তাদের পাইলিয়েংর কাজ চলছে। গত এপ্রিলে কাজ শুরু করেছিলেন। কাজ শেষ হলে মেশিনারি আনা হবে। তারা আশা করছেন ২০২৩ সালে তারা উৎপাদনে যেতে পারবেন।

তিনি আরো বলেন যে, তারা জমি নিয়েছেন ১৪ একর, যেখানে ৮৮২ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ হবে।

কাজী মুহিত আরও বলেন, ‘ফেব্রিক্সের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি করব, নীট ফেব্রিক্স তৈরি করব। প্রথম বছর ৩ হাজার লোক নিয়োগ হবে। পরে আরও নিয়োগ হবে। কারণ প্রথম বছর আমরা ফুল প্রোডাকশনে যেতে পারব না।’

শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবস্থান শেরপুর সদর উপজেলায়। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ ও সিলেট বিভাগের প্রায় ৪৪ হাজার লোকের কর্মসংস্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করে বেজা।

মাটি ভরাট কাজ শেষ। বেজা ভূমি উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন ও লেক উন্নয়নের কাজ শেষ করেছে।

শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস সংযোগের জন্য জালালাবাদ ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের একটি সাব স্টেশন স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

বেজাসূত্রে আরো জানা গেছে , মাটি ভরাট কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ। ভূ-গর্ভস্থ জলাধারা এবং পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ ভৌত অগ্রগতি কাজ প্রায় ১০০ ভাগ শেষ। অভ্যন্তরীন সড়ক নির্মাণ কাজের ভৌত অগ্রগতি প্রায় ৪৫ শতাংশ শেষ। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে পানি নিস্কাশনের জন্য আরসিসি ড্রেন নির্মাণ ভৌত অগ্রগতি শতভাগ।

৫০ বছরের ইজারায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নত এবং অনুন্নত জমি বরাদ্দ দেয় বেজা। জমি হস্তান্তরের আগে ভূমি উন্নয়ন, বিল্ডিং তৈরির অবস্থা সৃষ্টি ও সড়ক নির্মাণের দায়ভার বেজা’র।

বলে রাখা ভালো, দেশজুড়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ করছে বেজা। এর লক্ষ্য অর্জিত হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়াও এইসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বছরে ৪০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি হওয়ার আশা করছে বেজা। তথ্য সূত্র: নভেম্বর ৬, শনিবার ২০২১ তারিখে দি বিজনেস স্টেণ্ডার্ড-এ প্রকাশিত তথ্য থেকে সংগৃহীত।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT