1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
একবার ধান গাছ রোপণে বছরজুড়ে পাঁচবার ফলন - মুক্তকথা
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৭ অপরাহ্ন

একবার ধান গাছ রোপণে বছরজুড়ে পাঁচবার ফলন

ওমর ফারুক নাঈম॥
  • প্রকাশকাল : মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২১
  • ৬১৮ পড়া হয়েছে

 

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামে এখন দিগন্ত জুড়ে ফসলের মাঠ। এই গ্রামেরই সন্তান জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী। তার উদ্ভাবন করা নতুন এই জাতের ধান এবার চাষ হয়েছে নিজ গ্রামেই। অবিশ্বাস্য ভাবেই এই ধান একবার রোপনের পর পরপর পাঁচবার কাটা যায়। বছরে এই একই ধান গাছ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচবার ফসল পাওয়া যায়।
সরেজমিনে কুলাউড়ার কানিহাটি গ্রামে দেখা যায় গ্রামজুড়ে বিস্তৃর্ণ সোনালী ফসলের মাঠ। এই ফসলের মধ্যে জন্মেছে নতুন এই ইতিহাস সৃষ্টিকারী ধান। এই ধান একবার রোপণে বছরজুড়ে পাঁচবার ফলন এসেছে।

ধানের এ নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী। প্রবাসী এ বিজ্ঞানী দীর্ঘদিন ধরে ধানের নতুন জাত আবিষ্কার নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছেন। এক ধান গাছ থেকে পাঁচবার ফলন পাওয়াতে তিনি সন্তুষ্ট নন। যাতে ছয়বার একই গাছ থেকে ধান পাওয়া যায় এ নিয়ে বর্তমানে গবেষণা করছেন। একই সাথে নতুন জাতের এ ধান যাতে সারাদেশে চাষাবাদ করা যায় সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে শুরুটা কিভাবে হয়েছে সেটা তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান।

তিনি বলেন, আমরা কৃষির উপরে খুব নির্ভরশীল ছিলাম। আমি দেখেছি যারা ধান চাষ করে তারা উন্নত জীবন যাপন করতে পারে না। এটা আমার জন্য খুব পীড়াদায়ক ছিল। কারণ আমরা কৃষি নির্ভর পরিবারের মানুষদের দেখেছি দেশে খুব অবহেলিত। মানুষ শুধু চায় কমদামে ধান পেতে। কিন্তু কৃষকরা যে মূল্য পাচ্ছে না, সেটা নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। আমি ব্যক্তিগতজীবনে কৃষিতে কিভাবে আয় বাড়ানো যায় ব্যয় কমানো যায় এটা নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তা করি। আমার চিন্তা এটা- একটা ধান জমিতে থাকবে বিশাল আকার ধারণ করে আর অনেক অনেক ধান দেবে। আমি এই জিনিসটাই করতে চেয়েছি। অত্যন্ত আনন্দের বিষয় আমি করতে পেরেছি। বোরো হিসেবে বছরের প্রথমে লাগানো এ ধান ১১০ দিন পর পেকেছে। ওই গাছেই পর্যায়ক্রমে ৪৫ দিন পরপর একবার বোরো, দুইবার আউশ এবং দুইবার আমন ধান পেকেছে। কম সময়ে পাকা এই ধানের উৎপাদন বেশি, খরচও কম। তবে প্রথম ফলনের চেয়ে পরের ফলনগুলোতে উৎপাদন কিছুটা কম। কিন্তু পাঁচবারের ফলন মিলিয়ে উৎপাদন প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।

আবেদ চৌধুরী জানান, যে জাতগুলোর ধান পাকার পর কেটে নিয়ে গেলে আবার ধানের শীষ বের হয়, সেগুলো তিনি আলাদা করেন। এভাবে ১২টি জাত বের করেন। তিন বছর ধরে জাতগুলো চাষ করে দেখলেন, নিয়মিতভাবে এগুলো দ্বিতীয়বার ফলন দিচ্ছে। তারপর তিনি শুরু করেন একই গাছে তৃতীয়বার ফলনের গবেষণা। চারটি জাত একই গাছ থেকে পাঁচবার ফলন দিচ্ছে। এই চারটি জাতের ওপর ১০ বছর ধরে চলছে গবেষণা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বোরো ধানের এই চারটি জাত দুই বিঘা জমিতে রোপণ করা হয়। পরিমাণমতো ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়। সঠিকভাবে সেচ ও পরিচর্যা করার পর ১১০ দিনের মধ্যে ৮৫ সেন্টিমিটার থেকে এক মিটার উচ্চতার গাছে ফসল আসে। পরে মাটি থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পরিকল্পিতভাবে ওই ধান কেটে ফেলা হয়।

মে মাসে প্রথম দিকে প্রথমবার কাটা ধানে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হয়েছে চার টন। তারপর থেকে ৪৫ দিন অন্তর প্রতিটি মৌসুমে হেক্টরপ্রতি কখনও দুই টন, কখনও তিন টন ফলন এসেছে। সবগুলো জাত হেক্টরপ্রতি প্রায় ১৬ টন ফলন দিয়েছে। যেহেতু পাঁচবার চাষ হয় সেহেতু ‘প ব্রীহি’ নাম দিতে চাই। এখনও নিশ্চিত হয়নি। চাইছি আমার এলাকার নামেও দিতে।

তিনি বলেন, বছরের যে কোনো সময়ে এ ধান রোপণ করা যায়। এখন পরের ধাপগুলোতে কিছুটা কম উৎপাদন হচ্ছে। আমার চেষ্টা থাকবে, আরও বেশি ফলন বের করার। এ ধানের বীজ সংগ্রহ সহজ। কৃষকরা নিজেরাই তা করতে পারবেন। অন্য ধানের মতো বীজতলায় রোপণের পর চারা তুলে চাষ করতে হয়।

প্রথমবার ফলন দেওয়া ধান উদ্ভাবন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে আবেদ চৌধুরী বলেন, এর আগে আমি অন্য ধানের জাত উদ্ভাবন করেছি। দু’বার ফসল হয়, এমন ধানও উদ্ভাবন করেছিলাম; যাকে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ‘রাইস টুআইস’ বলেছে। আবার অনেকে ‘জীবন বর্ধিত ধান’ বলেছে। এই প্রথম সারা বছর ধরে আমার অন্য আরেকটি ধানের জাত মাঠে থাকল। এ ধানের চারা ৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপণ করতে হয়। ফলে গাছটি মাটি থেকে ভালোভাবে শক্তি নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে এবং একটি ধান গাছ থেকে আরও বেশ কয়েকটি ধান গাছ গজাতে থাকে।

আবেদ চৌধুরীর এই ধান দেখাশোনা করছেন রাসেল মিয়া। তিনি এই প্রতিনিধিকে বলেন, কৃষকরা খুব কম খরচে এই ধান উৎপাদন করতে পারবেন। প্রথমবার উৎপাদনে যে খরচ হয়, পরের বার উৎপাদনে তেমন খরচ নেই। জমিতে রেড়ি করে বোরো রোপণের পর আর জমি রেড়ি করতে হয় না। নির্দিষ্ট একটা মাপে ধান কেটে নেওয়ার পর মোড়া অংশে লতাপাতা ও ঘাস বাছাই করে সার দিই। এটুকু করলেই আবার ধানের গাছ বাড়তে থাকে।

রাসেল জানান, যদি পোকামাকড়ে ধরে তাহলে সামান্য কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এই ধান মেঘবৃষ্টি নষ্ট করতে পারে না। খুব শক্ত ধানের গাছ। এলাকার কৃষকরা এ ধানের ফলন দেখে চাষাবাদ করতে আগ্রহী হয়েছেন।
কানিহাটি গ্রামের কৃষক রুশন মিয়া বলেন, আমাদের এলাকার ড. আবেদ স্যার যে ধান উৎপাদন করেছেন সেটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা এই ধান নিজেরা চাষ করতে চাই।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন বলেন, এক গাছে পাঁচবার ধান উৎপাদন নতুন দেখেছি। এটি দেশের জন্য সুখবর। এই উদ্ভাবনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া উচিত।

ড. আবেদ চৌধুরী বংশগতিবিষয়ক গবেষক। একদল অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানীর সঙ্গে তিনি ফিস(ইন্ডিপেনডেন্ট সিড) জিন আবিস্কার করেন। তিনি লাল রঙের চাল ও রঙিন ভুট্টাও উদ্ভাবন করেছেন। তার ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার প্রতিরোধক রঙিন ভুট্টা বিশ্বব্যাপী আলোচিত। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ ফলনশীল ধান উৎপাদন ও ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে গবেষণা করছেন।

কুলাউড়ার কানিহাটি গ্রামের সন্তান আবেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরি নিয়ে চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানকার জাতীয় গবেষণা সংস্থার প্রধান ধানবিজ্ঞানী হিসেবে ধানের জিন নিয়ে গবেষণা করে কাটিয়ে দিয়েছেন ২০ বছর। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৩০০ রকমের নতুন ধান উদ্ভাবন করেছেন। পেশাগত কারণে বিদেশের মাটিতে গবেষণা করলেও দেশে তার গ্রাম কানিহাটিতে গড়ে তুলেছেন খামার। তার নামে আবেদ ধানও এলাকায় চাষ করে ব্যাপক সফল হয়েছেন কৃষকরা। তথ্য সূত্র: সিংক: ড. আবেদ চৌধুরী, ধানের উদ্ভাবক ও জীন বিজ্ঞানী।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT