1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
বার্নার্ড শো - মুক্তকথা
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:২১ পূর্বাহ্ন

বার্নার্ড শো

লুৎফুল কবীরের লিখা থেকে সংগৃহীত
  • প্রকাশকাল : বুধবার, ১০ আগস্ট, ২০২২
  • ১০০৯ পড়া হয়েছে

জর্জ বার্নার্ড শ ছিলেন নিরামিষভোজী। আমিষের প্রতি তাঁর কোনো টান ছিল না। তিনি বেঁচেছিলেন ৯৪ বছর। যখন তাঁর বয়স সত্তর পূর্ণ হলো, তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘কেমন আছেন আপনি?’
উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘খুব ভালোভাবে বেঁচেবর্তে আছি। কিন্তু আমাকে বিচলিত করে রেখেছে ডাক্তাররা। তাঁরা সব সময়ই কানের পাশে এসে পইপই করে বলতে থাকে, যদি মাংস না খাই, তাহলে আমি মরে যাব।’

তাঁর নব্বই বছর বয়সে যখন তাঁকে একই প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘খুব ভালো আছি। এখন আর কেউ আমাকে বিচলিত করে না। মাংস না খেলে আমি মরে যাব বলে যে ডাক্তাররা আমাকে ভয় দেখাতেন, তাঁরা সবাই মরে গেছেন।’

জর্জ বার্নার্ড শ’ ছিলেন হালকা-পাতলা গড়নের মানুষ। আর তার বন্ধু বিশ্বখ্যাত চিত্র পরিচালক আলফ্রেড হিচকক ছিলেন মোটা ও বিশাল ভুঁড়ির অধিকারী। একবার শ’-কে ঠাট্টা করে হিচকক বললেন, ‘তোমাকে দেখলে মনে হয় ইংল্যান্ডে দুর্ভিক্ষ চলছে।’ জবাবে শ’ বললেন, আর তোমাকে দেখলে বোঝা যায় দুর্ভিক্ষের কারণটা কী!’ জর্জ বার্নার্ড শ’ কাউকে অটোগ্রাফ দিতেন না। নিজের লেখা বইও কাউকে কখনো উপহার দেননি। তবে বিশ্বখ্যাত বাঙালি জগদীশচন্দ্র বসু ১৯২৮ সালে রয়েল সোসাইটির সভায় একটি ভাষণ দেন। সেই ভাষণ শুনে শ’ মুগ্ধ হয়ে যান।

পরদিনই কয়েকটি বই নিয়ে তিনি জগদীশচন্দ্রের বাসায় গিয়ে হাজির। তখন জগদীশচন্দ্র বাসায় ছিলেন না। উপহারের বইগুলোতে শ’ লেখেন জীববিজ্ঞানে পণ্ডিত এক ব্যক্তিকে জীববিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ এক ব্যক্তি উপহার দিলেন।

একবার এক তরুণ সম্পাদক একটি সংকলনে জর্জ বার্নার্ড শ’-র একটি লেখা ছাপার অনুমতি চেয়ে চিঠি লিখল। চিঠিতে উল্লেখ ছিল, সম্পাদকের বয়স কম তাই তার পক্ষে সম্মানী পাঠানো সম্ভব নয়। জবাবে শ’ লিখলেন, তরুণ সম্পাদকের বড় হয়ে ওঠা পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করতে রাজি আছেন।

একদিন এইচ জি ওয়েলসের সঙ্গে রাস্তায় হাঁটছিলেন শ’। ওয়েলস তার হাতের লাঠিটা ঘোরাচ্ছিলেন। আর তা শ’-র নাক ছুঁই ছুঁই করছিল। জর্জ বার্নার্ড শ’ তাকে বললেন, তোমার লাঠি ঘোরানো বন্ধ কর। যে কোনো সময় এটা আমার নাকে লাগতে পারে। তারপর ওয়েলস যুক্তি দেখালেন, ‘লাঠি ঘুরিয়ে হাঁটা আমার নাগরিক অধিকার।’ তারপর জবাবে জর্জ বললেন, ‘মানলাম। তবে এটাও ঠিক আমার নাকের ডগা যেখানে শেষ, তোমার নাগরিক অধিকার সেখান থেকে শুরু।’

তিনি সামাজিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যাগুলো হাস্যরসের ছদ্মাবরণে তিনি অত্যন্ত দক্ষ শিল্পীর হাতে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। শিক্ষা, বিয়ে, ধর্ম, সরকার, স্বাস্থ্যসেবা এবং শ্রেণী-সুবিধাই ছিল জর্জ বার্নার্ড শ’র লেখার বিষয়বস্তু। অধিকাংশ লেখাতেই শ্রমজীবী মানুষের শোষণের বিপক্ষে তার অবস্থান ছিল সুস্পষ্ট। একজন কট্টর সমাজতান্ত্রিক হিসেবে ফ্যাবিয়ান সোসাইটির পক্ষে জর্জ বার্নার্ড শ’ অনেক বক্তৃতা দেন ও পুস্তিকা রচনা করেন।

বার্নার্ড শ’এমন ব্যক্তিত্ব যিনি যুগপৎ সাহিত্যে নোবেল (১৯২৫) এবং অস্কার (১৯৩৮) পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল পুরস্কার গ্রহণে অনাগ্রহ থাকলেও স্ত্রীর পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত তা তিনি গ্রহণ করেন। তবে তিনি আর্থিক পুরস্কার নেননি।
তিনি বলেন, আমি ডিনামাইট তৈরির জন্য আলফ্রেড নোবেলকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু নোবেল পুরষ্কারের প্রবর্তনকারীকে ক্ষমা করতে পারি না, কারণ একমাত্র মানুষরুপী শয়তানই এমন পুরষ্কার প্রবর্তন করতে পারে। সুইডিশ রসায়ন বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল ডিনামাইট আবিষ্কারের পর “মৃত্যুর সওদাগর” হিসেবে নিন্দিত হয়েছিলেন।
নাট্যকার “জর্জ বার্নার্ড শ” নামটি মনে পড়লে, আজও কানে বাজে সেই বিখ্যাত ‘Man and superman’ নাটকের সংলাপ, “Beware of the man whose God is in the skies.”।’

জর্জ বার্নার্ড শ’ জন্মেছিলেন ২৬শে জুলাই ১৮৫৬। ডাবলিনের এক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারে। তাঁর পিতার নাম ‘জর্জ কার শ’ এবং মায়ের নাম ‘লুসিন্ডা এলিজাবেথ শ’। এই দম্পতির আরও দুটি কন্যা সন্তান ছিল। মেথোডিস্ট চার্চ পরিচালিত ডাবলিনের একটি গ্রামার স্কুলে তার পড়াশোনা শুরু হয়। ১৮৬৫-৭১ এর মধ্যে ‘শ’ চারটি স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং প্রত্যেকটি তাকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি বিরূপ করে তোলে। ডাবলিন ইংলিশ সায়েন্টিফিক এ্যন্ড কমার্শিয়াল ডে স্কুলে তার প্রাতিষ্ঠানিক পড়ার সমাপ্তি ঘটে। পরবর্তীকালে তিনি তাঁর লেখায় বলেছেন, স্কুলকে কারগার এবং স্কুল শিক্ষককে কারাপরিদর্শক। এ প্রসঙ্গে এক ব্রিটিশ সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, “প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না নিলে চাকরী পাবেন কোথায়? ” উত্তরে ‘শ’ বলেন,” কেরানী যারা হতে চায় তারা পড়বে, আমি চাই জীবনকে আবিষ্কার করতে”। তুমি জন্মালে, আর কিছুদিন কাটিয়ে গেলে এই পৃথিবীর বুকে, তা হবে না। এই ভেবে বোধ হয় ‘শ’ এর মন ছোটবেলা থেকে ইস্পাত-কঠিন হয়ে ওঠে। কারণ তিনি তো পরবর্তী কালে লিখবেন ব্রিটিশ সেনার অত্যাচারের বিরুদ্ধে নাটক “দি ডেভিল’স ডিসাইপল”।

একবার তার বাড়িতে বেড়াতে এসে এক মহিলা অবাক হয়ে বললেন, ‘মিস্টার শ, আপনার ঘরে দেখছি একটাও ফুলদানি নেই। আমি ভেবেছিলাম, আপনি এত বড় একজন লেখক; আপনি নিশ্চয়ই ফুল ভালোবাসেন। তাই আপনার বাসার ফুলদানিতে বাগানের তাজা, সুন্দর ফুল শোভা পাবে।’ প্রত্যুত্তরে শ সঙ্গে সঙ্গেই বললেন, ‘ম্যাডাম, আমি বাচ্চা ছেলেমেয়েদেরকেও ভালোবাসি। তার অর্থ এই নয় যে, আমি তাদের মাথা কেটে নিয়ে এসে ঘরে সাজিয়ে রাখব।

জর্জ বার্নার্ড শ’ কথা বলায় বেশ পটু ছিলেন। একবার এক ইংরেজ লর্ড বার্নার্ড শ’কে হেয় করার উদ্দেশ্যে বললেন,
– আচ্ছা মি. শ’ আপনার বাবা নাকি দর্জি ছিলেন?
বার্নার্ড শ’- হ্যাঁ।
লর্ড –  তাহলে আপনি কেন দর্জি হলেন না?
বার্নার্ড শ’- আপনার পিতা নাকি ভদ্রলোক ছিলেন?
লর্ড – নিশ্চয়ই!
বার্নার্ড শ’- তাহলে আপনি কেন তার মতো হলেন না।

জর্জ বার্নাড শ’র মুখের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য ছিল তার দাড়ি। একবার একটি ইলেকট্রিক রেজর নির্মাতা কোম্পানির কর্তারা বাজারে আসা তাদের নতুন রেজরের প্রচারণায় শ’র এই দাড়িকে নিশানা করল। শ’কে তারা এই নতুন রেজর দিয়ে দাড়ি কামানোর অনুরোধ করল। বিনিময়ে দেওয়া হবে লোভনীয় অঙ্কের টাকা। শ’ তাদের হতাশ করে বললেন, তাঁর বাবা যে কারণে দাড়ি কামানো বাদ দিয়েছিলেন, তিনিও ঠিক একই কারণে এ জঞ্জাল ধরে রেখেছেন। কোম্পানির কর্তারা কারণটি জানতে আগ্রহী হলে বার্নার্ড শ বললেন, “আমার বয়স তখন পাঁচ বছর। একদিন বাবা দাড়ি কামাচ্ছেন, আমি তাঁকে বললাম, ‘বাবা, তুমি দাড়ি কামাচ্ছ কেন!’ তিনি এক মিনিট আমার দিকে নীরবে তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘আরে তাই তো, আমি এ ফালতু কাজ করছি কেন?’ এই বলে তিনি সেই যে জানালা দিয়ে রেজর ছুড়ে ফেললেন, জীবনে আর কখনো তা ধরেননি।”

লেনিন সম্পর্কে খোলামেলা ভাষায় জানিয়েছিলেন, ‘লেনিন মানে অতীত নয়, ভবিষ্যৎ’ । রাশিয়ায় স্তালিনের সাথে দেখা হওয়ার পর তাঁর অকপট বক্তব্য, ‘আমি একজন রুশ শ্রমিকের সাথে দেখা করার আশা করছিলাম এবং আমি একজন জর্জিয়ান ভদ্রলোককে খুঁজে পেয়েছি।‘
তাঁর রাশিয়া সফরে শেষ দিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘আগামীকাল আমি এই আশার দেশ ছেড়ে আমাদের পশ্চিমা দেশগুলিতে ফিরে যাচ্ছি – হতাশার দেশগুলিতে।’

বার্নার্ড শ’র বিখ্যাত উক্তি, কোনও মানুষ যদি ২০ বছর বয়সে কমিউনিস্ট না হয়, সে বোকা। কোনও মানুষ যদি ৩০ বছর বয়সেও কমিউনিস্ট না হয়, সে আরও বড় বোকা।
জর্জ বার্নার্ড শ’ শুধু একজন আইরিশ নাট্যকারই নয় তিনি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনোমিক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতাও বটে।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT